পুলিশকে ঘিরে ক্ষোভ বিজেপির। নিজস্ব চিত্র।
আজ, শনিবার আসানসোল পুরভোট। তার আগে, হাতেনাতে পুর-এলাকায় ‘বহিরাগত’ ধরার দাবি করল বিজেপি। শুক্রবার সন্ধ্যায় আসানসোলের ঘাগরবুড়ি মন্দির লাগোয়া পুরসভার একটি অনুষ্ঠানবাড়ি ঘিরে ফেলেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। ভোটে ‘সন্ত্রাস করার মতলবে’ তৃণমূল ওই বাড়িতে ‘বহিরাগতদের’ রেখেছিল, অভিযোগ বিজেপির। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। এক জনকে আটক করা হয়। তবে সে লোকটি ‘বহিরাগত’ কি না, রাত পর্যন্ত জানায়নি পুলিশ।
আসানসোল পুরভোটের বিজেপির নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি এ দিন দাবি করেন, কর্মীদের সূত্রে খবর মেলে, মন্দির লাগোয়া পুরসভার একটি দোতলা অনুষ্ঠানবাড়িতে কয়েক জন ‘বহিরাগত’ আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল জামুড়িয়া থেকে এগারো জনের একটি দলকে এখানে রেখেছিল। উদ্দেশ্য ছিল, ভোটের দিন সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করা।”
খবর পেয়ে, আসানসোলের নানা প্রান্ত থেকে জিতেন্দ্র, আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এবং শতাধিক বিজেপি নেতা-কর্মী গিয়ে ওই অনুষ্ঠানবাড়িটি ঘিরে ফেলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সে সময় কয়েক জন অনুষ্ঠানবাড়ির ভিতর থেকে দোতলার বারান্দায় আসেন। তাঁরা চিৎকার করে দাবি করতে থাকেন, বিয়ে উপলক্ষে অনুষ্ঠানবাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন। বিজেপি আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটে যোগাযোগ করে।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই এসিপি (সেন্ট্রাল) মানবেন্দ্র দাসের নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দৃশ্যতই বিজেপি নেতৃত্ব ও পুলিশের মধ্যে বচসা বাধে। জিতেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, “অনুষ্ঠানবাড়িটি তৈরি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এটি কখনও ভাড়া দেওয়া হয়নি। এ দিন বিয়ের লগ্ন না থাকা সত্ত্বেও আজ তা ভাড়া দেওয়া হল কেন!’’
এর পরে, পুলিশ অনুষ্ঠানবাড়িটির ভিতরে ঢুকে রেজিস্টার দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু তা দেখানোর মতো কোনও কর্মী সেখানে ছিলেন না বলে দাবি। এই পরিস্থিতিতে অগ্নিমিত্রা-সহ বিজেপি নেতৃত্ব ওই এগারো জনকে গ্রেফতারের দাবি জানাতে থাকেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চাপান-উতোর চলতে থাকে। শেষমেশ পুলিশের একটি দল ভিতর থেকে এক জনকে বাইরে নিয়ে আসে। মানবেন্দ্র বলেন, “আমরা এক জনকে আপাতত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাচ্ছি।’’ তবে ওই ব্যক্তি ‘বহিরাগত’ কি না, সে সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি পুলিশকর্তারা।
পুলিশের পদক্ষেপের পরে, বিজেপি নেতৃত্বের প্রশ্ন, বাকি দশ জন কোথায় গেল! তাঁদের আশঙ্কা, ওই দশ জন কোথাও লুকিয়ে রয়েছেন। ভোটের দিনে সমস্যা তৈরি করতে পারেন। পাশাপাশি, রাত পর্যন্ত ধাদকা, ভগৎ সিংহ মোড়ের দু’টি লজেও ‘বহিরাগতেরা’ রয়েছেন অভিযোগ করে তা ঘিরে রেখেছেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। সেই সঙ্গে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে বহিরাগত মোতায়েন করার অভিযোগ তুলে রাত পর্যন্ত আসানসোলের সেন-র্যালে রোড অবরোধ করে রাখে সিপিএম ও বিজেপি। অভিযোগ, সেখানে একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।
বিজেপির তোলা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “তৃণমূল কোনও বহিরাগত আনেনি। এ সবই বিজেপির সাজানো ঘটনা।” ঘটনাচক্রে, এ দিন সকালেই রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটক দাবি করেছিলেন, “আসানসোলে আমাদের এত বেশি সংখ্যক কর্মী-সমর্থক রয়েছেন যে, আমাদের বহিরাগত নিয়ে আসার কোনও দরকার নেই। ও সব বিজেপির সংস্কৃতি।”