কুলটিতে গাছে ফোঁটা। নিজস্ব চিত্র।
পিতলের রেকাবিতে সাজানো হরেক মিষ্টি। রয়েছে ধান-দুর্বা-চন্দনের বাটি, মঙ্গলদীপও। উলুধ্বনি ও শাঁখ বাজছে, একে একে ফোঁটা দিচ্ছেন বোনেরা। তবে সে জন্য হাতে-হাতে কোনও উপহার মিলল না। কারণ, ফোঁটা যারা পেল তারা রক্ত-মাংসের জীব নয়। পরিবেশের স্বার্থে গাছেদের মঙ্গল কামনা করে ডালপালায় ফোঁটা দিলেন কুলটির বেশ কিছু ছাত্রী।
কুলটির নিয়ামতপুরে ৪ নম্বর কলোনি এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ছিল সাজ-সাজ রব। কোনও সংগঠনের উদ্যোগ নয়, এলাকারই কিছু ছাত্রী আয়োজন করেন এই গাছ-ফোঁটার। তাঁরা জানান, দিন দুয়েক আগে সবুজের ধ্বংস নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল। তখনই গাছকে ফোঁটা দেওয়ার ভাবনা মাথায় আসে। এর মাধ্যমে সবুজের ধ্বংস ঠেকানোর আর্জি জানানো যাবে বলে মনে হয় তাঁদের। এই ভাবনা জানানো হয় আরও কয়েকজনকে।
এ দিন সকালে নিজেদের বাড়িতে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান শেষ হতেই ওই ছাত্রীরা এক জায়গায় জড়ো হয়। দেখা যায়, সংখ্যাটা পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকের হাতেই মিষ্টি সাজানো রেকাবি। প্রদীপ, ধূপ জ্বেলে গাছে চন্দনের টিপ এঁকে নানা রঙের ফিতে জড়িয়ে ধান, দুর্বা ছিটিয়ে ফোঁটা দিলেন সকলে। মন্ত্র পড়া হল, ‘গাছের ডালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা’। রাস্তার পাশে কয়েকশো গাছে এ ভাবে ফোঁটা দিতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন পথচলতি মানুষজনও। তাঁদের হাতে মিষ্টি তুলে দিয়ে বোনেরা আবেদন করেন, অকালে সবুজ ধ্বংস রুখতে এগিয়ে আসুন।
কলেজ ছাত্রী সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কয়লা আর পাথুরে জমিতে এমনিতেই সবুজ নেই। যেটুকু আছে তা-ও কেটে ফেলা হচ্ছে। পরিবেশবিধি মেনে না চলায় দূষণে জেরবার হচ্ছে এখনকার ছেলেমেয়েরা। তাই এটা আমাদের নীরব প্রতিবাদ।’’ ছাত্রীদের কর্মসূচিতে পাশে দাঁড়িয়েছেন পাড়ার মহিলারাও। বিন্দা রাউত নামে এমনই এক জন বলেন, ‘‘ওদের এই উদ্যোগ শুনে ঘরে বসে থাকতে পারিনি। এখানে এসে ভাল লাগছে।’’ জানা গেল, চন্দন বেটে দেওয়া থেকে নাড়ু তৈরি, সবই করে দিয়েছেন পাড়ার মহিলারা।
সকাল-সকাল নিজের ভাইকে ফোঁটা দিয়ে গাছ-ফোঁটায় যোগ দিয়েছেন লাবণী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রত্যেকে ভাই বা দাদার মঙ্গল কামনা করি। এ বার গাছেদের জন্যও সেই কামনা করলাম।’’ বন্ধুদের সঙ্গে এই কর্মসূচিতে সামিল হয়ে আসফানা পারভিন বলেন, ‘‘সমাজ ও পরিবেশ রক্ষা করা জরুরি। এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই আর্জি অনেকের কানে পৌঁছবে বলে আশা করি।’’