ভবানন্দপুর গ্রামে পুজোর আগে। —বিশ্বনাথ মশান
গ্রামে দুর্গাপুজো হয় না। একটি মাত্র পারিবারিক কালীপুজো হয়। সেই পুজোকে ঘিরে মেতে ওঠে পুরো গ্রাম। কবে যে পারিবারিক এই পুজো সর্বজনীনের রূপ নিয়েছে, আজ আর মনে করতে পারেন না কেউ। বছরের পর বছর ধরে গ্রামের মানুষ মেতে ওঠেন এই উৎসবে।
দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের গৌরবাজার পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ভবানন্দপুর গ্রাম। প্রত্যন্ত এই গ্রামে প্রায় সাড়ে সাতশো পরিবারের বাস। অধিকাংশ মানুষই হয় দিনমজুর বা রাজমিস্ত্রির সহকারী। সেই গ্রামে বড় উৎসব বলতে মোহন বাউড়ির বাড়ির প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো এক কালীপুজো। পারিবারিক এক পুজো সার্বিক অর্থেই গ্রামের সবার কাছে মিলনমেলা। অশান্তি বা গ্রামীণ বিবাদ ভুলে সকলেই মেতে ওঠেন তাতে।
গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণ নয়, বাড়ির পুরুষেরা নিজেরাই দেবীর পুজো করে আসছেন। এখন যেমন সেই দায়িত্ব নিয়েছেন বর্তমান প্রজন্মের মোহনবাবু। তিনি নিজেই এ বার পুজো করছেন বলে জানান। শ্যামাপুজো হয় এখানে। মোহনবাবু বলেন, ‘‘বংশ পরম্পরায় এই রীতি চলে আসছে। আমরা নিজেরাই পুজো করি।’’ গ্রামের প্রত্যেকটি পরিবারই এই পুজোয় যোগ দেয়। বহু মানুষ দেবীর কাছে বছরভর মানত করেন। তাঁরাও পুজোর আয়োজনে যোগদান করেন। সারারাত জেগে থাকে গোটা গ্রাম। পরের দিন সকলে মিলে ভোগ খাওয়া হয়। এর পরে বিকেল ৩টের মধ্যে প্রতিমা মণ্ডপ থেকে বের করে গোটা গ্রাম ঘুরে রাত ৮টায় বির্সজন হয়। শুরু হয় আরও এক বছরের জন্য প্রহর গোনা।
গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া প্রিয়া বাউরি, নবম শ্রেণির বিশ্বজিৎ বাউরিরা জানায়, অন্য গ্রামে দুর্গাপুজো হয়। তাদের গ্রামে হয় না। মা-বাবার হাত ধরে পাশের গ্রামে দুর্গাপুজো দেখে আসে তারা। কিন্তু কালীপুজোয় আক্ষেপ মিটে যায়। তাদের কথায়, ‘‘কালীপুজো হয় জাঁকজমক করে। নানা রকম আলো জ্বলে, গানবাজনা, খাওয়াদাওয়া হয়। এই দু’দিন আমরা খুব আনন্দ করি।’’ গ্রামের বধূ বিপুলা রুইদাস, অশোকা রুইদাসেরা বলেন, ‘‘বছরভর এই পুজোর জন্য অপেক্ষায় থাকি। আত্মীয়স্বজনেরা গ্রামে ফেরেন। এই সময়টা আমাদের সারা বছরের ভাল থাকার রসদ জোগায়।’’