বর্ধমানের রাস্তা দাপাল বাইকবাহিনী। ছবি: উদিত সিংহ
একদা লাল দুর্গ। তার পরে একের পর এক নির্বাচনে সিপিএমের সেই দুর্গ ধূলিসাৎ হয়েছে। পুরনো সেই দুর্গেই এ দিন বর্তমান শাসকের সঙ্গে ধুন্ধুমার বাধল সিপিএম কর্মীদের। শনিবারের এই ঘটনাস্থল, বর্ধমান শহর। তা-ও পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের দফতরের সামনে। ইটবৃষ্টি থেকে লাঠালাঠি, মাথা ফাটা, বাদ গেল না কিছুই।
এ দিন সকাল থেকেই জেলাশাসক দফতরের সামনে প্রশাসনিক ভবনে বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিণ মহকুমার বিভিন্ন ব্লকের জন্য মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। পুলিশ ওই ভবনের দু’দিকেই ‘ব্যারিকেড’ করেছিল।
ঘটনার সূত্রপাত বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ। সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকার, আভাস রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকশো কর্মী মিছিল করে জেলাশাসকের দফতরের সামনে আসেন। পুলিশ তাঁদের আটকে প্রার্থী ও প্রস্তাবকদের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য এক এক করে মহকুমাশাসকের দফতরে পাঠাচ্ছিল। ঠিক সেই সময়ে জেলা কোষাগার দফতরের কাছে তৃণমূলের একটি দল হাজির হয়। সিপিএমের অভিযোগ, ওই দলটি ক্রমাগত গালিগালাজ করে। দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় বচসা।
অভিযোগ, এর খানিক বাদেই সিপিএমের জমায়েতের উপরে ইট পড়ে। এর পরেই সিপিএমের কয়েক জন তরুণী ও যুবককে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ‘ঝান্ডা’ হাতে তৃণমূলের ওই দলটির দিকে তাড়া করতে দেখা যায়। তাঁদেরকে আদালত চত্বেরর ভিতরে ঢুকিয়ে জমায়েতের দিকে ফিরে আসার সময়ে শহরের লক্ষ্মীপুর মাঠের এক তৃণমূল নেতাকে ধরে মারধর করা হয়। এর পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জেলাশাসকের দফতর লাগোয়া এলাকা।
তৃণমূলের লোকজন জড়ো হয়ে সিপিএমের দিকে ইট ছুড়তে থাকে। চায়ের দোকানে থাকা বেঞ্চ, জেলা কোষাগার ভবনের পিছনে পড়ে থাকা টিউবলাইট সবই ছোড়া হয় সিপিএম কর্মীদের দিকে। মাথা ফাটে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য নজরুল ইসলামের। পুলিশ তৃণমূল কর্মীদের দিকে লাঠি হাতে তেড়ে যায়। পুলিশ ফিরে এলে ফের দু’পক্ষের মধ্যে ইট-বৃষ্টি শুরু হয়। এর মধ্যেই তৃণমূলের ওই নেতার মাথায় সিপিএমের লোকজন লাঠির ঘা মারে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সিপিএম সমস্ত লোকজন নিয়ে দলীয় দফতরের দিকে ফিরে যাচ্ছিল। অভিযোগ, সেই সময়েই তৃণমূলের কয়েক জন কার্জন গেটের কাছে আভাসবাবু ও উদয়বাবুর উপরে হামলা চালায়।
সিপিএমের অভিযোগ, মনোনয়নপত্র দিয়ে ফেরার পথে কার্জন গেট থেকে জেলাশাসক দফতরের রাস্তায় এক এক জন সিপিএম প্রার্থীদের আটকে মারধর করে তৃণমূল। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ করে তৃণমূলের লোকেদের সরিয়ে দেয়।
এ দিনের গোলমালের পরে সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, “তৃণমূল গুন্ডাদের ‘পাহারা’র জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাচ্ছে না। শনিবার বর্ধমান শহরের প্রশাসনিক ভবনের কাছে তৃণমূল যে ঘটনা ঘটাল তা লজ্জাকেও হার মানায়। নির্বাচন স্রেফ প্রহসন।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ পাল্টা অভিযোগ করেন, “মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার নামে কয়েক জন প্রার্থীকে এনে সিপিএম গুন্ডামি করেছে। আমাদের কর্মী-নেতাদের মারধর করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছি।” তাঁর দাবি, তৃণমূলের এক জন মাথায় চোট পেয়েছেন। জখম আরও ১০-১২ জন।
যদিও এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “জেলায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া দেখার জন্য বর্ধমানের বাইরে আছি। ফিরে খোঁজ নেব।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) প্রিয়ব্রত সরকার শুধু বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।”