গণনা শুরু হতেই হুমকি

সবে গণনা শুরু হয়েছে। তার মধ্যে পুলিশের সামনেই তৃণমূলের গুন্ডারা প্রার্থী ও এজেন্টদের উপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। ফল, গোড়া থেকেই গণনাকেন্দ্রের বাইরে বিরোধী এজেন্টরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মেমারি ১ ব্লক তো বটেই, পূর্বস্থলী, কালনার দুটি ব্লক এমনকী মন্তেশ্বরেও দেখা গিয়েছে এই ছবি।

Advertisement

সৌমেন দত্ত ও কেদারনাথ ভট্টাচার্য

মেমারি ও কালনা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০১:১৫
Share:

কার্জন গেট চত্বরে বিজেপির বিক্ষোভ।ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

সবে গণনা শুরু হয়েছে। তার মধ্যে পুলিশের সামনেই তৃণমূলের গুন্ডারা প্রার্থী ও এজেন্টদের উপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। ফল, গোড়া থেকেই গণনাকেন্দ্রের বাইরে বিরোধী এজেন্টরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মেমারি ১ ব্লক তো বটেই, পূর্বস্থলী, কালনার দুটি ব্লক এমনকী মন্তেশ্বরেও দেখা গিয়েছে এই ছবি।

Advertisement

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের খেদ, “গ্রামের ভিতর বুথ রক্ষার জন্য লড়াই করেছি। কিন্তু প্রশাসন আর আগ্নেয়াস্ত্রের সামনে কী লড়াই করা সম্ভব! আমাদের প্রার্থী ও এজেন্টরা গণনাকেন্দ্রের বাইরে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন।” বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যেরও অভিযোগ, “সিপিএমকে বের করে দেওয়ার পরে আমাদের বের করা হয়। অথচ বুধবার রাতে পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিল।” যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শাসক শিবির।

মেমারি ১ ব্লকের গণনাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ টেবিলের সামনে তিন জন করে বসে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের গলায় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া এজেন্ট-কার্ড। বাকিরা কারা? সবাই চুপ থাকলেই তৃণমূলের এক প্রার্থী মিতা পান মুখ খুলে ফেলেন। তাঁর দাবি, “ওরাও আমার লোক। কেন এসেছে, সেটা কী বলে দিতে হবে?”

Advertisement

সিপিএমের এজেন্টদের দাবি, গণনাকেন্দ্রে ঢোকার পরেই একটি দরজা বন্ধ করে দেয় তৃণমূলের লোকেরা। এক একটি বেঞ্চে ১০-১২ জন বসে ছিল। জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। হঠাৎ করে কলেজের তিনতলা থেকে এক দল লোক লাঠি-আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসে তাঁদের বের করে দেয়। বাগিলা গ্রাম পঞ্চায়েতে ৭ ও ৮ নম্বর সংসদের কংগ্রেসের প্রার্থী ছিল। ওই দুই প্রার্থীর এজেন্ট হয়ে মেমারি কলেজে গণনাকেন্দ্রে এসেছিলেন বৃদ্ধ জয়ন্ত রায়। তাঁর অভিজ্ঞতা, “আমি নির্দিষ্ট টেবিলের সামনে বসে ছিলাম। হঠাৎ কয়েকজন আমার কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘অনেক তো বয়েস হয়েছে। আপনার দলও বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছে। খামোকা ঝামেলাই জড়াচ্ছেন কেন?’ এই বলে আমাকে হাত ধরে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের দাবি, মেমারি ১ ছাড়াও কালনা ২, পূর্বস্থলী ২, জামালপুর-সহ ৬টি গণনাকেন্দ্রে তাঁদেরকে মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “বুধবারই নির্বাচন কমিশনের কাছে এ রকম হবে বলে আশঙ্কা করে চিঠি দিয়েছিলাম। গত বারও বিকেল থেকে একই কাণ্ড হয়েছিল। এ বার সকাল থেকেই চলল সেই জোর খাটানো।’’ পূর্বস্থলীর সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ সাহার অভিযোগ, গণনা কেন্দ্রের ভেতর সকাল থএকেই তাঁদের লোকজন ছিল। আচমকা জনা পঞ্চাশ লোক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকে তাঁদের বের করে দেয়। প্রশাসন ও পুলিশ সব দেখেও নির্বিকার ছিল বলে তাঁদের দাবি। তিনি বলেন, ‘‘মনোনয়নের শুরু থেকেই সন্ত্রাস চলছিল। ভোটের দিনেও ভোট লুঠ, ছাপ্পা চলেছে অবাধে। এ বার গণনাকেন্দ্র থেকেও বের করে দেওয়া হল। এই না হলে গণতন্ত্র!’’

একই অভিযোগ উঠেছে কালনা ১, কালনা ২, পূর্বস্থলী ১ এবং মন্তেশ্বর ব্লকে। বিজেপির জেলা সম্পাদক ধনঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘চরম সন্ত্রাস সত্ত্বেও ধাত্রীগ্রাম, কৃষ্ণদেবপুর-সহ অনেক এলাকাতেই দলীয় কর্মীরা বুথ আগলে ভোট করিয়েছিলেন। গণনাকেন্দ্র থেকে আমাদের বের করে সেই খামতি পুষিয়ে নিল শাসক দল।’’ এই অভিযোগে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের সমুদ্রগড় বাজারে পথ অবরোধও করে কয়েকজন নির্দল প্রার্থী এবং তাঁদের সমর্থকেরা। মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলের অভিযোগ, কালনা ২ ব্লকের গণনা কেন্দ্র থেকে তাঁদের কর্মীদের বের করে দেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

যদিও সব অভিযোগ উড়িয়ে মেমারির পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীর দাবি, ‘‘এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। কর্মীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মতো সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন।’’ দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘বিরোধীরা হেরে গিয়ে মিথ্যে কথা বলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement