‘রক্ষী’রা রাস্তাতেই, মার সরকারি কর্মীকে

সোমবার নির্দেশিকা দিয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এ দিনও মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে। সেই মতো সকাল থেকেই কার্জন গেট চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন তৃণমূলের কর্মীরা। লাঠি হাতেও দেখা যায় জনা কুড়িকে। তার মধ্যেই মাথায় টুপি, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে জেলাশাসকের দফতরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন দেবাশিসবাবু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান ও কালনা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২১
Share:

তাড়া: সরকারি কর্মীকে মার লাঠিধারীদের, কার্জন গেট চত্বরে। ছবি:উদিত সিংহ

পালা করে তাঁর ব্যাগের তল্লাশি নিচ্ছিল তৃণমূলের ‘পাহারাদারে’রা। বিরক্ত হয়ে তিনি বলে ফেলেন, “উফ! কী যে হচ্ছে।” কী যে চলছে, তা এরপরেই হাড়ে হাড়ে টের পান তিনি। সেচ দফতরের দামোদর ক্যানেল ডিভিশনের কর্মী দেবাশিস মুখোপাধ্যায়কে লাঠি, চেন দিয়ে মারধর করা হয়। সচিত্র পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও ছাড়া হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। মঙ্গলবার দেবাশিসবাবুর মতো আরও অনেক সরকারি কর্মীকেও রাস্তা থেকে ফেরানো হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

সোমবার নির্দেশিকা দিয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এ দিনও মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে। সেই মতো সকাল থেকেই কার্জন গেট চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন তৃণমূলের কর্মীরা। লাঠি হাতেও দেখা যায় জনা কুড়িকে। তার মধ্যেই মাথায় টুপি, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে জেলাশাসকের দফতরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন দেবাশিসবাবু। অভিযোগ, আচমকা সেই সময় তিন, চার জন যুবক তাঁর পথ আটকা ব্যাগে কী রয়েছে দেখতে চায়। দেবাশিসবাবু তাঁদের জানান, তিনি সেচ দফতরের কর্মী, চন্দননগরের বাসিন্দা। পঞ্চায়েত ভোটে পোলিং অফিসার হয়েছেন। রাস্তা আটকালে জরুরি নথি নিয়ে অফিস পৌঁছতে দেরি হবে বলেও জানান। শেষে ব্যাগে তল্লাশির পরে ছাড় মেলে। কিন্তু ভবী ভোলার নয়!

অভিযোগ, একটু এগিয়েই ফের পথ আটকান বর্ধমানের তৃণমূলের এক কাউন্সিলর। তিনি পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে ব্যাগ থেকে তা বের করার সময় দেবাশিসবাবু বলে ফেলেন, ‘উফ! কী যে হচ্ছে’। এরপরেই তাঁকে ঘিরে ধরে শুরু হয় কিল-চড়-লাথি। অভিযোগ, মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয় প্রাণিবিকাশ দফতরের কাছে। রাস্তায় ফেলে পড়তে থাকে লাঠি-চেনের বাড়ি। শেষে তৃণমূলের একাংশের সহযোগিতায় দুষ্কৃতীদের হাত থেকে ছাড়া পান তিনি। দেবাশিসবাবুর ক্ষোভ, “আমি অফিস যাচ্ছিলাম। রাস্তায় বারবার আটকে ব্যাগে তল্লাশি চালানো হয়। সরকারি পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও কেন মারধর করা হল, বুঝতে পারলাম না!”

Advertisement

এ দিন বেলা সওয়া ১০টা থেকেই মনোনয়নকে ঘিরে জমায়েত শুরু করেছিল তৃণমূল। অন্য দিনের মতই লাঠিধারী তৃণমূলের যুবকেরা ব্যাগ হাতে পথচারী দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছিল। অনেক বিচারপ্রার্থীকে কার্জন গেট থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এমনকী, সরকারি অফিসে যেতেও বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিকের কথায়, “আমাদের দলের লোকেরা জড়িত নই বলেই জানি।”

কালনাতেও সকালেই মনোনয়ন দিতে মহকুমাশাসকের অফিসে হাজির হন জনা ছয়েক বিজেপি কর্মী। অভিযোগ, তাঁদের দেখেই লাঠি, বাঁশ হাতে তাড়া করে তৃণমূলের লোকজন। ব্লক অফিসের কাছেও লাঠি হাতে, মুখে রুমাল বেঁধে কয়েক জনকে ঘুরতে দেখা যায়। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভৌমিক বলেন, ‘‘সন্ত্রাস উপেক্ষা করেও নসরতপুর-সহ কয়েকটি এলাকায় দলীয় কর্মীরা মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিলেন। মনোনয়ন জমা না হলেও তৃণমূলের রক্তচক্ষুর মুখে পড়তে হয়েছে।’’ তৃণমূল অবশ্য অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement