Bardhaman Police

ছাত্রীদের আত্মরক্ষার পাঠ পুলিশের 

স্কুলের চৌহদ্দিতে কসরত করছিল এক দল ছাত্রী। শুধু ছাত্রীরা নয়, বর্ধমানের ইছলাবাদের গার্লস স্কুলে তাতে যোগ দিয়েছেন শিক্ষিকারাও।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৯
Share:

ইছলাবাদের স্কুলে চলছে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের চৌহদ্দিতে কসরত করছিল এক দল ছাত্রী। শুধু ছাত্রীরা নয়, বর্ধমানের ইছলাবাদের গার্লস স্কুলে তাতে যোগ দিয়েছেন শিক্ষিকারাও। জানা গেল, ক্যারাটের প্রশিক্ষণ নিতে নেমেছেন তাঁরা। ক্রমশ বেড়ে চলা নারী নির্যাতনের সময়ে আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতেই এই ‘বিশেষ’ ব্যবস্থা, জানালেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের উদ্যোগে স্কুলে-স্কুলে শুরু হয়েছে এই ‘আত্মরক্ষার পাঠ’ দেওয়া। বর্ধমান শহরের বিদ্যার্থী গার্লস হাইস্কুল ও পুলিশ লাইনের কাছে ইছালাবাদ বিবেকানন্দ বালিকা বিদ্যালয়ে ‘পাইলট প্রজেক্ট’ চলছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুধু ছাত্রীদের নয়, ‘মার্শাল আর্ট’ শিখতে আগ্রহী জনা দশেক মহিলা কনস্টেবলকেও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁরা স্কুলে-স্কুলে গিয়ে ছাত্রীদের শেখাতে পারেন। প্রতি স্কুলের ৪০ জন ছাত্রীকে নিয়ে এই প্রকল্প চালু করেছে পুলিশ।

জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’টি স্কুল নিয়ে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে। ধীরে-ধীরে বর্ধমান শহরের সব স্কুলেই আত্মরক্ষার পাঠ দেওয়া হবে। তার পরে কাটোয়া ও কালনায় এই প্রকল্প নেওয়া হবে।’’ জেলা পুলিশের কনস্টেবল, ‘ব্ল্যাক বেল্ট’ স্বপন সর্দারকে প্রশিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনিই শহর ঘুরে কয়েকজন মহিলা প্রশিক্ষককে খুঁজে বার করেছেন। তাঁরাও ক্যারাটেতে ‘ব্ল্যাক বেল্ট’ বলে জেলা পুলিশের দাবি। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই গত সপ্তাহ থেকে স্কুলে প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের ‘নোডাল’ অফিসার বর্ধমানের মহিলা থানার আইসি নন্দিতা সাহামজুমদার। তিনিই স্কুলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ঠিক হয়েছে, বর্ধমান শহরের ১০টি গার্লস স্কুলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘প্রশিক্ষকেরা এক ঘণ্টা করে ১২টি ক্লাস নেবেন। তার পরে ছাত্রীদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। যদি কোনও ছাত্রীর মধ্যে শেখায় ঘাটতি থাকে, সম্ভব হলে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।’’

পুলিশের দাবি, জনবহুল এলাকা বা মেলায় মেয়েদের উপরে হামলার ঘটনা ঘটলে পুলিশ পৌঁছাতে-পৌঁছাতে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। গোড়ায় মেয়েরা যদি কিছু কৌশল নিতে পারে, তাহলে এমন ঘটনা অনেকটা রোখা যায় বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের উপস্থিত বুদ্ধির জোরেও দুষ্কৃতী ধরা পড়ে যায়। সে জন্যই পুলিশ ছাত্রীদের আত্মরক্ষার পাঠ দিতে চাইছে বলে জানান কর্তারা।

ছাত্রীদের মধ্যেও ক্যারাটে প্রশিক্ষণে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিদ্যার্থী গার্লস স্কুলের স্নেহা সরেন, আয়েষা খাতুন, ইছালাবাদের অর্পিতা পাল, বৈশাখী চক্রবর্তীরা বলে, ‘‘আমাদের পক্ষে আলাদা ভাবে কোথাও গিয়ে ক্যারাটে শেখা সম্ভব নয়। তাই স্কুলে শেখানো হবে শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছি। সব সময় অভিভাবকদের নিয়ে বাইরে বেরনো সম্ভব নয়। নিজেদের জন্য তো বটেই, প্রয়োজনে যাতে আশপাশের কাউকেও সাহায্য করতে পারি, সেটাও শেখানো হচ্ছে।’’

ওই দু’টি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ভাস্বতী লাহিড়ী, পামেলা চট্টোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পাঠ খুবই জরুরি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement