‘রেকি’ করেই ব্যাঙ্কের ২০ লাখ লুট, দাবি তদন্তে

‘অপারেশন’ শেষ করে যে পথে দুষ্কৃতীরা এসেছিল, সে দিকে না গিয়ে হুগলির পাণ্ডুয়াগামী রাস্তা ধরে চম্পট দেয়। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের পালিয়ে যাওয়ার পরে নানা স্থানে নাকাবন্দি করা হলেও কারও নাগাল পাওয়া যায়নি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৩:৪২
Share:

সিসিটিভি ফুটেজ। নিজস্ব চিত্র

প্রথমে এলাকা রেকি করা। তার পরেই ‘অপারেশন’।

Advertisement

সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে কালনা ২-এর সিঙেরকোন এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লুটের ঘটনায় দুষ্কৃতীরা এমন ‘ছকে’ই কাজ করেছে, মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, দুষ্কৃতীরা স্থানীয় নয়। অথচ, তারা যে রাস্তা দিয়ে এসেছিল, ফিরতি পথে সে দিকে না গিয়ে অন্য রাস্তা ধরে। এই তথ্য দেখেই তদন্তকারীদের দাবি, লুটের আগে একবার বা বেশ কয়েক বার এলাকা দেখে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।

মঙ্গলবার দুপুরে কালনা-বৈঁচি রোডের পাশে দোতলা ভবনে থাকা ব্যাঙ্কের ওই শাখায় চলে লুটপাট। ঘটনার তদন্ত শুরু করেন কালনার এসডিপিও, সিআই এবং ওসি। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ)। মঙ্গলবার প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক ধরে ব্যাঙ্কের ভিতরে সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা ও ব্যাঙ্ক কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশ কর্তারা। খতিয়ে দেখা হয় ব্যাঙ্ক লাগোয়া দোকানের সিসিটিভি ফুটেজও। আর তা দেখেই কিছু তথ্য মিলেছে বলে জানান পুলিশকর্তারা।

Advertisement

কী তা? তদন্তকারীরা জানান, মোট চার জন দুষ্কৃতী দু’টি নয়, একটি মোটরবাইকে চড়ে এসেছিল। দু’জন ব্যাঙ্কের ভিতরে লোহার রেলিং টপকে ‘ক্যাশ কাউন্টার’-এর ভিতরে ঢুকে পড়ে। এর পরে নগদ টাকার বান্ডিল তারা কাউন্টারের বাইরে থাকা এক দুষ্কৃতীর হাতে তুলে দেয়। ওই দুষ্কৃতী সঙ্গে সঙ্গে তা ব্যাগে ভরে ফেলে। অন্য এক জন দুষ্কৃতী চার দিকে নজর রাখছিল। জানা যায়, ওই চার দুষ্কৃতীদের মধ্যে একমাত্র মোটরবাইক চালকের মাথায় একটি কমলা রঙের টুপি ছিল। বাকিদের মাথায় হেলমেট ছিল না। চালকের গায়ে ছিল ফুলহাতা নীল জামা। ‘অপারেশন’ শেষ করে যে পথে দুষ্কৃতীরা এসেছিল, সে দিকে না গিয়ে হুগলির পাণ্ডুয়াগামী রাস্তা ধরে চম্পট দেয়। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের পালিয়ে যাওয়ার পরে নানা স্থানে নাকাবন্দি করা হলেও কারও নাগাল পাওয়া যায়নি।’’

তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, ব্যাঙ্কের ভিতরে বিপদঘণ্টি থাকলেও তা দুষ্কৃতী দল ব্যাঙ্ক ছাড়া মাত্র বাজানো হয়নি। তদন্তকারীরা জানান, ব্যাঙ্কের কর্মীরা দাবি করেছেন, দুষ্কৃতীরা ফিরে আসতে পারে, এই ভেবে বিপদঘণ্টি বাজানো হয়নি। শুধু তাই নয়, সোনা লুট করতে দুষ্কৃতীরা ভল্টের চাবি চেয়েছিল ব্যাঙ্কের কর্মীদের কাছে। সেই সময় এক কর্মী জানান, ম্যানেজার ছুটিতে। তাঁর কাছেই রয়েছে ভল্টের চাবি। তার পরে দুষ্কৃতীরা ভল্টের সোনার আশা ছেড়ে দেয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, প্রায় ২০ লক্ষ টাকা, গ্রাহকদের সোনা ও নগদ টাকা লুট হয়েছে।

এসডিপিও (কালনা) শান্তনু চৌধুরী বলেন, ‘‘তদন্তে নেমে নানা দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করি, দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতার করা যাবে।’’ তবে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রাহক ও এলাকাবাসীর একাংশ। যদিও এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া অবশ্য বলেন, ‘‘এলাকার ব্যাঙ্কগুলির নিরাপত্তার কী পরিস্থিতি, তা জানতে দ্রুত প্রশাসনিক বৈঠক করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement