অটোয় পড়ুয়া আনা-নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা। ছবি: শৈলেন সরকার
টানাপড়েন চলছিল দীর্ঘ দিন ধরেই। অবশেষে আসানসোল মহকুমায় অটো চলাচলের অনুমোদন দেওয়া শুরু করল প্রশাসন। সোমবার অটোচালকদের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই অনুমোদন তুলে দেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। একই সঙ্গে এ দিন অটো চালানোর উপরে একগুচ্ছ বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়। ১ অগস্ট থেকে শহরে এই বিধিনিষেধ লাগু হবে। সেগুলি না মানলে গ্রেফতার করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
২০০৩ সালে আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ে আসানসোল মহকুমায় পরিবহণ দফতর এত দিন কোনও অটো চলাচলের অনুমতি দেয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও মহকুমা জুড়ে মিনিবাসের রুটে প্রতি দিন কয়েক হাজার অটো চলাচল করত বেআইনি ভাবেই। মিনিবাস মালিকেরা বারবার অভিযোগ করেছেন, এর ফলে তাঁদের যাত্রী সংখ্যা কমছে। তাঁদের ক্ষতি হচ্ছে। যাত্রী তোলা নিয়ে প্রায়ই অটো চালকদের সঙ্গে মিনিবাসের চালক-খালাসির অশান্তি-মারপিট বেধে যেত। যার জেরে বাস বন্ধ, বিক্ষোভে দুর্ভোগ পোহাতে হত যাত্রীদের।
সমাধানসূত্র বের করতে জেলা প্রশাসন মিনিবাসের মালিক ও অটো চালকদের নিয়ে বৈঠক করে। দু’পক্ষের স্বার্থ বজায় রাখতে ঠিক হয়, মিনিবাসের রুটে অটো চলাচল বন্ধ করা হবে। যে রাস্তায় মিনিবাস চলে না, সেখানে অটোর রুট তৈরি করে পারমিট দেওয়া হলে মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন আপত্তি করবে না বলে জানায়। দু’পক্ষ সহমত হওয়ায় মহকুমায় অটো চলাচলের পারমিট দেওয়া শুরু হল। সোমবার জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানান, অটোর পারমিটের জন্য আবেদন জমা পড়েছে ১৫২৪টি। কাগজপত্র ঠিক থাকায় ১৪৮১ জনকে তা দেওয়া হচ্ছে। মহকুমায় মোট ৭৪টি রুটের জন্য ১৮৭০ জনকে পারমিট দেওয়া হবে।
তবে অটো চলাচলেরর উপরে কয়েকটি বিধিনিষেধ থাকছে। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানান, মিনিবাসের রুটে কোনও অটো চলাচল করবে না। প্রত্যেকটি অটোর গায়ে নির্দিষ্ট রুটের উল্লেখ থাকতে হবে। সেই রুট বাদ দিয়ে অটো চললে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঝাড়খণ্ড অথবা পুরুলিয়া পরিবহণ দফতর থেকে যাঁরা অটোর রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন, তাঁদের স্থানীয় ঠিকানা উল্লেখ করে পারমিট নিতে হবে। শহরের কোথাও পুলকার হিসেবে অটো চালানো যাবে না। জেলাশাসক বলেন, ‘‘১ অগস্ট থেকেই অটো চালকদের এই বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। দরকারে পুলিশ গ্রেফতার করবে।’’ প্রশাসনের নির্দেশ পালন করা হবে বলে দাবি করেছেন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া।
জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন এ দিন আরও এক বার টোটোর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার বার্তা দেন। পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, জাতীয় ও রাজ্য সড়কে টোটো চলতে দেখলেই যেন ধরপাকড় হয়। একই সঙ্গে অটোকে পুলকার হিসেবে ব্যবহার করা হলেও পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।