শ্যামসুন্দরপুর কোলিয়ারির মণ্ডপসজ্জা।—ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
কোথাও মাথা তুলেছে ত্রিপুরার রাজবাড়ি, কোথাও ইসকনের নতুন মন্দির। কোনও মণ্ডপে এক চালার সাবেক প্রতিমায় শেষ তুলির টান পড়ছে, কোথাও সাজানো চলছে নটরাজ শৈলীর দেবী দুর্গা। দর্শকদের নজর কাড়তে নিজের নিজের ভাবনা নিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত খনি অঞ্চলের বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তারা।
অন্ডালের শীতলপুর কোলিয়ারি সর্বজনীন দুর্গা পুজো এ বার ৩০ বছরে পা দিল। উদ্যোক্তারা জানান, ত্রিপুরার রাজবাড়ির আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। সঙ্গে একচালায় সাবেক প্রতিমা। মণ্ডপ, প্রতিমার পাশাপাশি দশমীতে আসতবাজি প্রদর্শনীও দর্শকদের নজর কাড়বে বলে আশা উদ্যোক্তাদের। ৪৯ বছরে পা দেওয়া লছিপুর সেন্ট্রাল কাজোড়া সর্বজনীনের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে অভিজাত ভবনের আদলে। সঙ্গে থাকছে আলোকসজ্জা। দর্শক টানতে মায়াপুরের ইসকনের নতুন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে খাসকাজোড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসবে। সাবেক মূর্তি, বাহারি আলোর সাজও দর্শকদের ভাল লাগবে বলে দাবি এই পুজোর উদ্যোক্তাদের। একই সঙ্গে এ বার পরিবেশ সচেতনতাকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান পুজো কমিটির সদস্য বিষেণদেও নুনিয়া। এলাকা জুড়ে সাফাই অভিযান ও গাছ লাগানোর জন্য পুজোর খরচ বাঁচিয়ে তাঁদের তরফে ১৫ হাজার টাকা স্থানীয় পঞ্চায়েতকে দেওয়া হবে বলে জানান বিষাণবাবু।
দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে অন্ডাল নিউ ট্রাফিক কলোনির পুজোয়। সঙ্গে থাকছে নটরাজ শৈলীর দেবী মূর্তি। অন্ডাল ১২ নম্বর রেল কলোনির সর্বজনীন দুর্গাপুজো এ বার ৫১ বছরে পা দিল। কাল্পনিক মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে এই পুজোর মণ্ডপ। সিদুলি কোলিয়ারি সর্বজনীনের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে ইসকনের পুরনো মন্দিরের অনুকরণে। সঙ্গে সাবেক একাচালায় প্রতিমা। ৪৫ বছরে পা দেওয়া পশ্চিমপল্লি সর্বজনীনের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে কাপড় ও পাট দিয়ে। সঙ্ঘশ্রী ক্লাবের পুজো এ বার ৬৭ বছরে পা দিল। মাটির ভাঁড়ের ব্যবহারে মঙ্গলঘটের আদলে মন্ডপ সেজে উঠছে। শান্তির বার্তা দিতে মা দুর্গা এখানে ধ্যানমগ্ন।
জামুড়িয়ার ইস্টকেন্দা কলোনি সর্বজনীনের পুজো শুরু হয়েছে ১৯৭৬ সালে। কাল্পনিক মন্দিরের আদলে তৈরি এই মণ্ডপে অসুরকে নাশ করতে হিমালয় থেকে নেমে আসছেন দেবী। এভারেস্ট জয় করার পরে নিঁখোজ হয়ে যাওয়া চার অভিযাত্রীর খোঁজে উদ্ধারকারী দল তল্লাশির ছবি তুলে ধরা হবে পাহাড়ের অন্য দিকে। কেন্দা ফুটবল মাঠ সর্বজনীন দুর্গাপুজোর মণ্ডপে এ বার থাকছে সেন্ট টেরেজার মূর্তি। পুজো কমিটির তরফে দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় জানান, এ বার সবুজায়নের জন্য প্রচারই তাঁদের পুজোর থিম। প্রতিমাও তৈরি হয়েছে সেই থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। নবমীতে রক্তের শ্রেণি নির্ণয় ও দশমীতে বিনা খরচে চক্ষু পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। আসানসোল নিউ আপার চেলিডাঙা অ্যাথলেটিক ক্লাবের পুজোর এ বার সুবর্ণ বর্ষপূর্তি। থিমের মণ্ডপ, একচালার মূর্তির পাশাপাশি পঞ্চমী থেকে দ্বাদশী পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আসানসোল ট্রাফিক কলোনি সর্বজনীনের দুর্গাপুজোর এ বারের মণ্ডপ দেখে মনে হবে একটি সাধারণ বাড়ি। পুজো কমিটির তরফে রাম ঘোষ, ভানু বসুরা জানান, ১৯৩৪ সালে এক বাসিন্দার স্বপ্নাদেশে এলাকার মানুষ ও রেলকর্মীরা জোট বেঁধে পুজো শুরু করেন বলে কথিত রয়েছে। এখানে গণেশ ও কার্তিকের অবস্থান উল্টো দিকে থাকে বলে জানান রামবাবু। সপ্তমীর সন্ধ্যায় ম্যাজিক শো ও বাংলা ব্যাণ্ডের গানের অনুষ্ঠান থাকছে। অষ্টমীর সকালে আঁকা প্রতিযোগিতা ও নবমীর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে বলে জানান তিনি।