আসানসোল বাজারের পার্কিং। নিজস্ব চিত্র
সাম্প্রতিক অতীতে পার্কিংয়ের পরিচালন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের নানা অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। পুরসভাও জানিয়েছে, এই ব্যবস্থায় বেশ কিছু গরমিল পাওয়া গিয়েছে। বকেয়া রয়েছে কয়েক কোটি টাকাও। এই পরিস্থিতিতে পুর-এলাকার পার্কিং ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে পুরসভা। পুরসভার দাবি, এর ফলে, স্বচ্ছতা আসবে। বাড়বে আয়ও।
আসানসোল পুরসভার পার্কিং-জ়োনের সমস্যা দীর্ঘদিনের। পার্কিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরসভার অন্যতম ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হক জানান, পার্কিং সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পরীক্ষার কাজ চলছে। তাঁর কথায়, “প্রাথমিক ভাবে কিছু গরমিল পাওয়া গিয়েছে। এই পার্কিংগুলি চালানোর জন্য যে ঠিকা সংস্থাগুলি দায়িত্ব পেয়েছিল, সেগুলির থেকে কয়েক কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। একই সঙ্গে সমস্ত পার্কিং-জ়োনের নতুন করে দরপত্র
ডাকা হবে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে ৩৯টি পার্কিং-জ়োন আছে। এর মধ্যে পুরসভা ছ’টি নিজে চালায়। বাকিগুলি ঠিকা দেওয়া আছে। সেগুলির বরাতের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমোদনে চলছে সেগুলি। ওয়াসিমুল জানান, আগে দরপত্র ডেকে যে ঠিকা সংস্থা বেশি টাকা দিতে সম্মত হত, সেই সংস্থাকেই বরাত দেওয়া হয়েছে। তার পরে ওই সংস্থার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হত। ওয়াসিমুলের দাবি, কিন্তু এতে সমস্যা হল, বেশ কয়েকটি ঠিকা বরাত পাওয়ার পরে, প্রতিশ্রুতির টাকা সময় মতো জমা দেয়নি। ফলে, পুরসভার রাজস্বে ঘাটতি হয়েছে। ওয়াসিমুল বলেন, “এ বার দরপত্র ডাকার পরে, যে সংস্থা বরাত পাবে, তার কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে নেওয়া হবে। ফলে, বকেয়া থাকবে না।” তাঁর সংযোজন: “দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরনো ঠিকা সংস্থাগুলিকে ব্ল্যাক লিস্ট করা হবে, যাতে তারা আর কোনও ভাবেই দরপত্রের প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে না পারে। পুরো বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আনতে অনলাইন ‘ওপেন টেন্ডার’ ডাকা হবে। ফলে, যে কেউ এতে যোগ দিতে পারবে।”
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, কুলটির লছিপুরে মাস ছয়েক আগে একটি পার্কিং-জ়োন করা হয়েছে। ওয়াসিমুলের দাবি, এখান থেকে পুরসভা প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় করেছে। এই পার্কিং জ়োনটির জন্যও সম্প্রতি এক বছরের সময়ে অনলাইন দরপত্র ডাকা হয়েছে। এর থেকে পুরসভার ঘরে আসবে প্রায় ৭ লক্ষ ১০ হাজার টাকা।
তবে পার্কিং জ়োনের স্বচ্ছতা নিয়ে এখনও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা। পুরসভার বিরোধী নেত্রী, বিজেপির পুরপ্রতিনিধি চৈতালি তিওয়ারির অভিযোগ, “পুরনো দরপত্র বাবদ পার্কিং জ়োনগুলির কাছ থেকে পুরসভার প্রায় আড়াই কোটি টাকা পাওনা আছে। সেই টাকা আদায়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ, তা আজও অজানা।” তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের কয়েক জন সদস্য নিজেদের লোকেদের দরপত্র পাইয়ে দিয়ে এই
দুর্নীতি করেছেন।” তাঁর দাবি, নতুন দরপত্র খোলাখুলি ভাবে করতে হবে। কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধি গোলাম সরওয়ারের দাবি, পার্কিং দুর্নীতির অভিযোগ তাঁরাই প্রথম তুলেছিলেন। কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেননি। যদিও, টাকা বকেয়ার প্রসঙ্গে ওয়াসিমুলের বক্তব্য, “বকেয়া আদায়ের চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।”