এত্তা জঞ্জাল: কল্যাণপুরে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অফিসের পাশে। ছবি: পাপন চৌধুরী।
কেন্দ্রের আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের ‘স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের সব চেয়ে নোংরা দশটি শহর রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। তার মধ্যে অন্যতম আসানসোল। ২০১৭-তেও এই রিপোর্ট অনুযায়ী, আসানসোল ছিল তালিকার তলার দিক থেকে দু’নম্বরে।
এই পরিস্থিতিতে সরব হয়েছে বিরোধীরা। পুরসভার দাবি, রিপোর্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। যদিও, মন্ত্রক সূত্রে দাবি, পুরসভার পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতেই বিভিন্ন মাপকাঠির নিরিখে নম্বর দেওয়া হয়েছে। এ দিকে, জানা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ১০৬ ওয়ার্ডের আসানসোল পুর-এলাকায় বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরুই হয়নি! ২০১৭-য় ‘খারাপ ফলের’ পরে কেন্দ্র পুরসভাকে দু’দফায় ৪৬ কোটি আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি, নানা পরামর্শ দিয়েছিল। পুরসভাও আবর্জনা সাফাই ও নিকাশির ক্ষেত্রে নানা পরিকল্পনা নেয়।
কিন্তু বাস্তবে কতটা কাজ হয়েছে, তা নিয়ে এই রিপোর্ট প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বলে মনে করছে বিরোধীরা। শুক্রবার সেন-র্যালে রোডের ধারে একটি পরিত্যক্ত অফিসের বাইরে, আসানসোল বাজারের পার্কিং জ়োন লাগোয়া এলাকা, আসানসোল পুরসভা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে স্টেশন যাওয়ার রাস্তা, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে শ্রীনগরে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সামনে, কল্যাণপুর লাগোয়া দেশবন্ধু পার্কের উল্টো দিক, ৮৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইসমাইল, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের জিটি রোডের দু’ধার— সর্বত্র দেখা গিয়েছে আবর্জনার স্তূপ। অথচ, পুরসভা জানাচ্ছে, ১০৬টি ওয়ার্ডের জন্য প্রায় তিন হাজার সাফাইকর্মী রয়েছেন। প্রয়োজনে অস্থায়ী সাফাইকর্মীও নিয়োগ করা হয়। বাড়ি-বাড়ি আবর্জনা তুলতে কয়েক হাজার ঠেলা রয়েছে। কালীপাহাড়ির বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে আবর্জনা পৌঁছে দেওয়ার জন্য রয়েছে শতাধিক গাড়ি।
মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের দাবি, “প্রতিদিন সকালে শহরের আবর্জনা সাফাই ও নিকাশির কাজ করা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে ফের শহরে আবর্জনা জমা হতে থাকে।” পাশাপাশি, ওয়াকিবহাল মহল জানাচ্ছে, শহরের বায়ু দূষণ রোধ করতে রাস্তায় জল ছেটাতে জন্য কেন্দ্রের অনুদানে একটি জল-কামান আনা হয়েছে। কিন্তু তা হলে কেন এই হাল? সূত্রের খবর, কালীপাহাড়ি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে দু’টি ও বার্নপুরের শ্যামডিহি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে একটি যন্ত্র বসানো হয়েছে। কিন্তু সেগুলি বর্জ্য পৃথকীকরণের যন্ত্র। মঙ্গলপুরে একটি বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও, জমি-জটে তা আটকে।
অর্থাৎ পুরসভা সূত্রেই জানা যাচ্ছে, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজ শুরুই হয়নি! এই পরিস্থিতিতে বিরোধীরা সরব হয়েছেন। বিজেপির রাজ্য কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জিতেন্দ্র তিওয়ারির দাবি, “২০১৭-র রিপোর্টের পরে, শহরকে আবর্জনা মুক্ত করতে মঙ্গলপুরে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
কেন্দ্রের তরফে ১,৫০০ কোটি টাকা যাতে পাওয়া যায়, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ করি। কিন্তু সেই সময়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বিরোধিতায় তা করা যায়নি। আমিও রাজ্যের বিরুদ্ধে আসানসোলকে বঞ্চনার অভিযোগ করে মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করি।” যদিও, এই রিপোর্ট ও জিতেন্দ্রের বক্তব্যকে আমল দিচ্ছেন না মেয়র বিধান। তাঁর কথায়, “শহরকে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হয়। দু’-একটি জায়গায় মাঝেমধ্যে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তা বলে সমগ্র শহরকে এই ভাবে নোংরা তকমা সেঁটে দেওয়াটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।” কিন্তু, রিপোর্ট দেখে চিন্তায় চিকিৎসকদের একাংশ। চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, “আসানসোল এমনিতেই একটি শিল্পাঞ্চল। ফলে, এখানে বায়ুদূষণ থাকবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু শহরের সাফাই এবং নিকাশি ব্যবস্থাও যদি ভেঙে পড়ে, তা হলে দূষণের মাত্রা আরও বাড়বে। জনস্বাস্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।”