ফাইল চিত্র।
গরু পাচার মামলায় ধৃত অনুব্রত মণ্ডলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে, নানা ঘটনাপ্রবাহ দেখে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, দল অনুব্রতের পাশে দাঁড়ানোর বার্তাই দিচ্ছে। এই আবহে, আজ, শনিবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে ফের তোলার কথা অনুব্রতকে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর পাশে দাঁড়াতে আদালত চত্বর ও রাস্তায় জেলা তৃণমূলের লোকজনকে দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে, দলের অন্দরে অনুব্রত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী শুক্রবার জানিয়েছেন, তাঁরা অবশ্যই ময়দানে থাকছেন।
তাঁরা আদালত চত্বরে বা রাস্তায় থাকবেন কি না, জানতে চাওয়া হলে, নরেন্দ্রনাথ শুক্রবার বলেন, “থাকবই তো। লোকজনও থাকবে। ওই দিন যে ভাবে বিরোধীরা গালিগালাজ করেছেন, তা কোনও মানুষকে করা যায় না। আমরা এর প্রতিবাদ জানাব।”
গত ১১ অগস্ট অনুব্রতকে বোলপুর থেকে সোজা আসানসোলে আনা হয়। পথে, সিপিএম, বিজেপির নেতা-কর্মীরা নানা জায়গায় বিক্ষোভ-প্রদর্শন করেন। আসানসোল আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনী থাকা সত্ত্বেও দুই বিরোধী দলের কয়েক হাজার কর্মী, সমর্থককে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা যায়। কিন্তু গোটা পর্বে বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’-একটি জায়গা ছাড়া সে ভাবে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পথে নামতে দেখা যায়নি। এমনকি, বিষয়টি নিয়ে আগ বাড়িয়ে কোনও কর্মসূচি নেওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধ করা হয় বলে জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর।
কিন্তু সম্প্রতি খোদ তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, “এক কেষ্টকে ধরলে লক্ষ কেষ্ট (অনুব্রত মণ্ডল) আছে।”— এমন বার্তার কথা জেনে সিবিআই হেফাজতে থাকে অনুব্রতকেও বেশ ‘চনমনে’ দেখিয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এই আবহে ‘দলের সমর্থনের’ ছবিটাও যেন দৃশ্যত বদলাতে শুরু করেছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা। ১৪ অগস্ট মমতার ওই বার্তার পরে, ১৫ অগস্ট অনুব্রতের বীরভূমের নিচুপট্টির বাড়িতে প্যান্ডেল বাঁধা থেকে পুজোর আয়োজন করতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের নেতা, কর্মীদের একাংশকে। এসেছিলেন বীরভূমের বহু তৃণমূল নেতা। হাজির ছিলেন দলের সাংসদ অসিতকুমার মাল। — এই আবহে নরেন্দ্রনাথের উক্তি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। যদিও, তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের প্রতিক্রিয়া, “এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।”
এ দিকে, তারাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে বলে জানিয়েছে বিজেপি। দলের জেলার মুখপাত্র বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শনিবার আমরা রাস্তায়, আদালতে অনুব্রত মণ্ডল ও তৃণমূলের দুর্নীতির প্রতিবাদ জানাব।” পাশাপাশি, সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে আগের দিন মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। আমরা তার পাশে ছিলাম। এ দিনও তেমন পরিস্থিতি হলে, অবশ্যই আমরা ময়দানে থাকব।”
এমন আবহে, শুক্রবার থেকেই আসানসোলে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকেও বিশেষ নজর থাকবে বলে মনে করছেন অনেকেই। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার থেকেই আদালত চত্বরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।