আসানসোল জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনুব্রতকে। —নিজস্ব চিত্র।
আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে থাকবেন অনুব্রত মণ্ডল। তাঁকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী।
শুনানি চলাকালীন আদালত কক্ষেই অনুব্রতের জন্য রাখা ছিল ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং নেবুলাইজার। কিন্তু কাজে লাগেনি।
মক্কেলের জামিনের আবেদন জানিয়ে অনুব্রতের আইনজীবী তাঁর হয়ে বলেন, ‘‘দরকার হলে বীরভূমে থাকব না। নিজাম প্যালেসের পাশে বাড়ি ভাড়া করে থাকব। বীরভূমের ১০০ মিটারের মধ্যে ঢুকব না।’’
সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘এখন তদন্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছে। এখন অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে।’’
সিবিআইয়ের আইনজীবী: এটি একটি বৃহত্তর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। অভিযুক্ত তাঁর হিসাব বহির্ভূত অর্থের উৎস দেখাতে পারেননি। বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি পাওয়া গিয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ ও বাড়ির লোকেদের নামে। কিন্তু উনি কিছুই বলতে পারছেন না। অভিযুক্ত প্রভাবশালী। এবং শুরু থেকেই তদন্তে অসহযোগিতা করছেন। উনি তদন্তে অংশগ্রহণই করেননি।
বিচারক: হ্যাঁ, এটা সবাই এটা জানি।
সিবিআইয়ের আইজীবী: উনি সেই এলাকার জেলা সভাপতি যেখানে গরু পাচার চক্র চলছে। নিজের পদ ব্যবহার করে তিনি পাচারের পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠেছিলেন। একে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলা হচ্ছে, কিন্তু বিপক্ষের আইনজীবী কি কোনও প্রমাণ দিতে পারবেন?
বিচারক: রাজনীতি বাইরে রাখুন।
সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘পশুর হাট থেকে গরু পাচার হত। তার প্রমাণ আছে। বিএসএফও এর সঙ্গে জড়িত।’’
সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘যড়যন্ত্রী যে কোনও সময় ও জায়গায় যোগ দিতে পারেন। শুরুতেই যোগ দিতে হবে এমনটা জরুরি নয়। এটা একটা অপরাধ। ষড়যন্ত্রমূলক অপরাধ।’’
অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে। এই রোগে কারও প্রাণ পর্যন্ত যেতে পারে। তাই যে কোনও শর্তে মক্কেলের জামিনের আবেদন করা হয়েছে।’’
বিচারক বলেন, ‘‘বিএসএফকে আরও বেশি দায়ী করা উচিত। রাজ্যের মধ্যে গরু পাচার ততটা দোষের নয়, যদি না তা সীমান্ত পেরিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে।’’
অনুব্রতের আইনজীবীর সওয়াল, ‘‘আমার মক্কেলের সব কিছুর সঙ্গে প্যান নম্বর দেওয়া আছে। আমার মক্কেলের প্যান আর আধার চেক করলেই সব মিলবে। এ জন্য হেফাজতে রাখার কী দরকার?’’
অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, ‘‘আমার মক্কেলকে প্রভাবশালী বলা হচ্ছে, কিন্তু আদতেই তিনি তা নন।’’
অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের সঙ্গে কারও পরিচয় থাকতেই পারে। কিন্তু সরকারে আমার প্রভাব রয়েছে তার কোনও প্রমাণ নেই। আমার এলাকায় তিন জন আমাকে চেনেন, তার অর্থ আমি প্রভাবশালী!’’
‘‘রাজনৈতিক পদমর্যাদার জন্য তিনি বিভিন্ন উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের পরিচিত। এক জন ফিলানথ্রপিস্টও মুখ্যমন্ত্রীর পরিচিত হতে পারেন। কিন্তু তার মানে কি তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে প্রভাবিত করতে পারেন?’’— অনুব্রতের আইনজীবী।
অনুব্রতের আইজীবীর সওয়াল, ‘‘ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে হলে বিএসএফের চোখে পড়তে হবে। আমার মক্কেলের এতে কোনও ভূমিকা পাওয়া যায়নি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি (অনুব্রত) পশ্চিমবঙ্গের ভিতরে গরু নিয়ে যাতায়াতে প্রোটেকশন দিয়েছি। কিন্তু কোনও বিএসএফকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। এক মাত্র ব্যতিক্রম সতীশ কুমার। আমার মক্কেলের নাম এফআইআরেও নেই। ওঁর নাম এসেছে সহগল হোসেনের ক্ষেত্রে।’’
অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, ‘‘আমি এখনই এটা নিয়ে কিছু বলতে পারব না। আমি ওঁর সঙ্গে এখন কথা বলতে পারছি না। যদি জামিন মঞ্জুর করেন তা হলে আমি কথা বলে জানতে পারব। আর সমস্ত সীমান্তই তো বিদ্যুতের তার দিয়ে ঘেরা এবং পাহারার দায়িত্বে বিএসএফ।’’
অনুব্রতের আইনজীবীকে বিচারকের প্রশ্ন, ‘‘১৬ কোটি ৯৩ লক্ষ কি এলআইসি থেকে আসা টাকা?’’
অনুব্রতের আইনজীবীর সওয়াল, ‘‘অভিযোগ করা হচ্ছে বহরমপুর থেকে গরু মুর্শিদাবাদের সীমান্তে পাঠানো হয়েছে। সেই কাজে নাকি আমার মক্কেল ‘প্রোটেকশন’ দিয়েছেন। আমার প্রশ্ন, কী জন্য প্রোটেকশন? সারা দেশে অনেক গরু কেনাবেচার মেলা হয়। শোনপুরের মেলা সবচেয়ে বড়। এটা আসলে সংবাদমাধ্যমে বিচার চলছে। মিডিয়া সাত দিন আগে যেটা দেখিয়েছে, আজ সেটাই আদালতে উঠছে। ’’
অনুব্রতের আইনজীবী সওয়াল করেন, ‘‘নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিশানা করে তদন্ত করছে সিবিআই। যারা কেন্দ্রে থাকা রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে। আসল লক্ষ্য রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলকে অপদস্থ করা। এদের কেবল ভোটের আগে তদন্ত করতে দেখা যায়। আর রাজ্যের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের লোকেদের জেলে পাঠাতে চায়।’’