মাস তিনেক আগে এমনই চেহারা হয়েছিল স্টেশন ভবনের। ফাইল চিত্র
সোশ্যাল মিডিয়া মারফত বর্ধমান স্টেশনের ভবন ভেঙে পড়ার ছবি দেখেছিলাম মাস কয়েক আগে। সেই স্টেশনের একই জায়গায় দুর্ঘটনার শিকার হতে হবে, ভাবতেই পারিনি! ‘ফলস সিলিং’য়ের বোর্ড প্রথমে মাথায় পড়ে, তার পরে ঘাড়ে আঘাত করে। প্রথমে তেমন কিছু মনে হয়নি। পরে মাথায়, ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয়। অসুস্থও বোধ করি। বাসে বাড়ি ফেরার সময়ে আর কী ঘটতে পারত, সে কথা ভেবে আতঙ্কিত বোধ করছি। আর ভাবছি, রেলের গাফিলতির শিকার সব সময় আমাদের মতো যাত্রীরা হয় কেন?
আট মাস আগে রোজগারের জন্য কেরলের করিকোর এলাকায় গিয়েছিলাম। নির্মাণ শ্রমিকের কাজও জুটে গিয়েছিল। কাকা, ভাই ও জামাইবাবুর সঙ্গে থাকতাম। ভালই দিন কাটছিল। কিন্তু ‘লকডাউন’-এ সব গোলমাল হয়ে গেল। সেই এপ্রিল থেকেই নাদনাঘাটের দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের সোনাপুরি গ্রামে বাড়ি ফেরার জন্য মনটা ছটফট করছিল। শেষে ৫ জুন ট্রেনে ওঠার সুযোগ পেলাম। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ট্রেন বর্ধমানে স্টেশনে দাঁড়াতেই মনটা আনন্দে ভরে উঠেছিল। ব্যাগপত্র নিয়ে নেমে দাঁড়িয়েছিলাম স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য লাইনে। আমার আগে মাত্র ১১ জন।
লাইনে দাঁড়িয়ে উপরে তাকাতেই দেখি, রাস্তার দিকে একটি থামের পাশে ফাঁপা হয়ে রয়েছে একটি বোর্ড। তার চার দিক হলুদ হয়ে গিয়েছে। জল লেগে যে ফেঁপে গিয়েছে, তা আমাদের মতো নির্মাণ শ্রমিকেরা ভালই বুঝতে পারেন। কী মনে হল, মাথার ঠিক উপরে তাকালাম। ফাঁপা অংশ চোখে পড়ল না। ততক্ষণে ছ’জনের স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। থার্মাল স্ক্রিনিং করে বাসের দিকে এগোচ্ছেন তাঁরা। কে এক জন বললেন, ‘এই জায়গাটা ভেঙে পড়েছিল। এখন দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই।’ আমি এগিয়ে টেবিলের সামনে গেলাম। আর তখনই ধুপ করে আওয়াজ। সাদা রঙের পিপিই পরে থাকা মহিলারা চিৎকার করে উঠলেন। আমি কিছু বোঝার আগেই তিন-চার জন তুলে নিয়ে গিয়ে ফাঁকা জায়গায় বসালেন। মাথায় ব্যথা করছিল। সবাই মিলে জল দিলেন। ছুটে এলেন পুলিশ-স্বাস্থ্যকর্মীরা। সবাই আমাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। ধাতস্থ হওয়ার পরে তাঁদের জানালাম, আমি ঠিক আছি। বাড়ি যেতে পারব।
পরে আমাকে বাসে তুলে দেওয়া হল। বাস ছাড়ার সময়ে জানলা দিয়ে স্টেশনের দিকে দেখে ভাবছিলাম, শুধু ‘ফলস সিলিং’-এর একটা টুকরো পড়ায় বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেলাম। যদি ফের সবটা ভেঙে পড়ত, কী হত ভেবেই গা শিউরে উঠেছিল। আমার কাকা, জামাইবাবু, ভাইও দুর্ঘটনায় পড়ত, এ সব ভাবলেই ভয় লাগছে।