এ মাসের মধ্যে প্রথম দফার গ্রাম সংসদ সভা শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল পঞ্চায়েত দফতর। মঙ্গলবার পঞ্চায়েত দফতরের যুগ্ম সচিব মর্যাদার এক আধিকারিক আপাতত গ্রাম সংসদের সভা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেন। বৃহস্পতিবার ওই নির্দেশ প্রতিটি পঞ্চায়েতে পাঠিয়ে দিয়েছে জেলার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর।
নির্দেশ দেখার পরেই শাসক ও বিরোধীদের দাবি, দফতর চিঠিতে যে কারণই উল্লেখ করুক না কেন, গত কয়েক দিন ধরে গ্রাম সংসদের সভা করতে গিয়ে ‘কাটমানি’-প্রশ্নে জেরবার হতে হচ্ছে প্রধানদের। সভা বাতিলও করতে হচ্ছে। তার জেরেই এই সিদ্ধান্ত।জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’সপ্তাহ ধরে গ্রাম সংসদ সভা করার পরিস্থিতি নেই বলে বিভিন্ন এলাকার প্রধানেরা সংশ্লিষ্ট বিডিওদের জানান। বিডিওরা জেলা প্রশাসনের কাছে ওই রিপোর্ট পাঠান। তার পরেই ওই নির্দেশ।
পঞ্চায়েত দফতরের কর্তা ওই চিঠিতে জানিয়েছেন, ‘বর্ষা দেরিতে আসার জন্যে রাজ্যের প্রচুর জমি এখনও রোয়া এখনও হয়নি। এখন বর্ষা চলে এসেছে, তাই পড়ে থাকা জমিতে দ্রুত ফসল রোয়ার জন্যে সরকার পরামর্শ দিচ্ছে। পরামর্শ মেনে চাষিরা তুমুল ব্যস্ততার সঙ্গে কাজ শুরু করেছেন। কৃষিভিত্তিক রাজ্যে এই সময় গ্রাম সংসদ হলে তা সফল হবে না’। সংসদ হলে উপস্থিতি কম হবে, এই আশঙ্কায় সভা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেমারির একটি পঞ্চায়েতের প্রধানের যদিও দাবি, “এখন বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। পুরোপুরি চাষের কাজে কেউ নামেননি। তা ছাড়া সন্ধ্যার দিকে গ্রাম সংসদ হলে চাষিদের অসুবিধাও হয় না। হাস্যকর যুক্তি দিয়ে সভা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হল।’’ আবার ভাতার, বর্ধমান ২ ও আউশগ্রামের একাধিক প্রধানের দাবি, রাস্তাঘাটে, বাড়িতে কাটমানি নিয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। এ অবস্থায় সংসদের সভা করতে গেলে গোলমালের মধ্যে পড়তে হত। যে কারণই দেখানো হোক, বৈঠক বন্ধ হয়ে ভাল হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে ভাতারের নিত্যানন্দপুরের প্রধান পোষলা গ্রামে সংসদের সভায় গিয়েছিলেন। ‘কাটমানি’ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই বৈঠক ভেস্তে যায়। আউশগ্রাম, মেমারি, গলসির বিভিন্ন গ্রামেও একই পরিস্থিতি। অভিযোগ, গ্রাম সংসদ বৈঠকের আগে কাটমানি নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য প্রচার করছে বিজেপি।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি গ্রাম সংসদের সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার ন্যূনতম ১০ শতাংশ বাসিন্দা উপস্থিত থাকার কথা। লোকসভা পরবর্তী প্রতিটি সংসদে ভিড়ও ভালই হচ্ছিল। তবে ১৩ জুন থেকে জেলায় কার্যত কোনও সংসদের বৈঠক হয়নি। বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীর দাবি, “বৈঠক ডাকবে কি করে? কাটমানি নিয়ে মানুষের প্রশ্নের জবাব তো দিতে হবে। পঞ্চায়েত ভোটের মতোই ফের গ্রামের মানুষের অধিকার কাড়ল তৃণমূল।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকারের অভিযোগ, “কাটমানির তাগাদার ভয়ে প্রধানরা পঞ্চায়েতমুখো হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। সভায় মানুষ একজোট হয়ে হিসেব চাইবে। সরকার তাই সভা বন্ধ করে নেতাদের বাঁচাতে চাইছে।’’
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু অবশ্য বলেন, “পঞ্চায়েত মানে মানুষের অধিকার। সেই অধিকার খর্ব করে সভা হওয়া উচিত নয়। সে জন্যই পঞ্চায়েত দফতর চাষের মরসুমে বৈঠক পিছিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে অন্য কারণ খোঁজা সময় নষ্ট।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।