প্রতীকী ছবি।
টাকার বিনিময়ে পড়ুয়া ভর্তির একটি জাল চক্র কাজ করছে। জাল নথিপত্র-সহ শুক্রবার আসানসোল দক্ষিণ থানায় এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আসানসোলের বানোয়ারিলাল ভালোটিয়া কলেজের (বিবি কলেজ) অধ্যক্ষ অমিতাভ বসু। পুলিশ জামুড়িয়ার বাসিন্দা, বিশাল পাণ্ডে নামে ওই অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। শনিবার বহু চেষ্টা করেও বিশালের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
অধ্যক্ষ জানান, প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের গত ২ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রেশনের জন্য শংসাপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছিল। দেখা যায়, প্রায় ২৯ জন পড়ুয়ার ভর্তির মেধা তালিকায় নাম ছিল না। অথচ, তাঁরা রেজিস্ট্রেশন করাতে এসেছেন। তিনি বলেন, “শিক্ষাকর্মীরা বিষয়টি আমাকে জানান। এর পরেই ওই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতারণার কথা জানতে পারি। প্রতারিত হওয়া ছাত্রছাত্রীদের নামও থানায় জমা দেওয়া হয়েছে।”
প্রাথমিক তদন্তের শেষে পুলিশের দাবি, বিশাল অন্তত ৬১ জন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ। বিবি কলেজ-সহ আসানসোলের বেশ কয়েকটি কলেজে পড়ুয়া ভর্তির নামে বিশাল এই কাজ করেছে বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। প্রত্যেক পড়ুয়ার থেকে এ জন্য সে সাত থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছিল বলে অভিযোগ।
কী ভাবে হত ‘প্রতারণা’? অমিতাভ জানান, কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য যে সব পড়ুয়ার নাম মেধা তালিকায় ওঠেনি, তাঁদের তালিকা কোনও ভাবে জোগাড় করত বিশাল। তার পরে, সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। এর পরে, প্রত্যেককে তাঁদের পছন্দের বিষয়ে ভর্তি করানোর আশ্বাস দিয়ে টাকা নিত। ছাত্রছাত্রীদের বিশ্বাস অর্জন করতে বিশাল কলেজের আসল ‘মানি রিসিট’-এর নকল বানিয়েছিল। তাতে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ার নাম এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিস্তারিত বিবরণ লিখে নিজেই সই করে তা ওই পড়ুয়াকে দিত বিশাল। এই পরিস্থিতিতে, সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে গোটা বিষয়টি বোঝা কোনও ভাবেই সম্ভব হত না।
মহম্মদ নূর নামে এক ছাত্র শনিবার বলেন, “বিশাল নিজেকে তৃণমূল কর্মী হিসাবেও আমাদের কাছে পরিচয় দিয়েছিল। কলেজের জাল মানি রিসিট দিয়েছিল। পুরো বিষয়টিই যে জালিয়াতি, এক বারের জন্যও তা বুঝতে পারিনি। এখন আমার মতো অনেকের ভবিষ্যৎ কী হবে, জানি না।” বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূলও। দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “ওই লোকটি দলের নাম জড়িয়ে মিথ্যা কথা বলেছে। ওর বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ করুক।”
তবে এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, যে সব ছাত্রছাত্রীদের নাম মেধাতালিকায় ওঠেনি, তাঁদের নামের তালিকা কী ভাবে পেত অভিযুক্ত? সংশ্লিষ্ট মহলের কৌতূহল, তা হলে কি কলেজেরই কেউ গোটা বিষয়টির সঙ্গে জড়িত। যদিও, অমিতাভর দাবি, “প্রাথমিক তদন্তে কলেজের কেউ এর সঙ্গে জড়িত নন বলেই জানা গিয়েছে।”