প্রতীকী ছবি।
বর্ধমানের পিজি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগের রেশ মিটতে না মিটতেই আর এক নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে ভুল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল।
কালনার এক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং কালনার মহকুমাশাসককে লিখিত অভিযোগে রোগীর পরিবার দাবি করেছে, রোগীর ভুল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে সঙ্কটজনক অবস্থায় রোগীকে বাড়ি ফিরিয়ে দিতে চাইছেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নার্সিংহোমের তরফে দাবি করা হয়েছে, রোগী বর্তমানে সুস্থ। খুব শীঘ্রই তাঁকে ছাড়া হবে। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া।
কালনা শহরের বৈদ্যপুর মোড়ে রয়েছে এই নার্সিংহোমটি। শহরের নিভুজিবাজার এলাকার বাসিন্দা লাল্টু শেখ জানান, গলব্লাডার অপারেশনের জন্য তাঁর পিসতুতো বোন আলিয়া বিবিকে ওই নার্সিংহোমে গত বছর ১১ অগস্ট ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসক আব্দুস সামাদ তাঁকে জানান, গলব্লাডার নয়, অস্ত্রোপচার দরকার রোগীর অন্ত্রে। এর জন্য ২৫ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়। অস্ত্রোপচারের ৯ দিন পর আলিয়াকে নার্সিংহোম থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।
লাল্টু শেখের দাবি, কিছু দিন পর থেকে বোন আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর পেট ফুলতে থাকে। অস্ত্রোপচারের ক্ষত থেকে পুঁজ বেরোতে থাকে। ফের ওই নার্সিংহোমে বোনকে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক আবার একটি অস্ত্রোপচার করেন। তাতেও আলিয়ার উন্নতি হয়নি। বাড়াবাড়ি হওয়ায় চলতি বছর ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ফের নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। লিখিত অভিযোগে লাল্টু জানিয়েছেন, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের অন্ধকারে রেখে ফের একটি অস্ত্রোপচার করেন। এর পরেও রোগীর অবস্থার উন্নতি হয়নি। লাল্টুর অভিযোগ, ‘‘নার্সিংহোমের বিছানায় শুয়ে সারাদিন আমার বোন যন্ত্রণায় ছটফট করছে। অথচ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাকে বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছে। অথচ ওদের ভুল চিকিৎসার জন্যই আমাদের মতো গরিব পরিবারের খরচ হয়ে গেছে দেড় লক্ষ টাকার বেশি।’’
লাল্টু বলেন, ‘‘আমরা অন্য চিকিৎসকদের কাছেও বিষয়টি নিয়ে মতামত নিয়েছি। তাঁরা বলেছেন, চিকিৎসায় গাফিলতি রয়েছে। হোনকে বাঁচানোর আর্তি জানিয়েই প্রশাসনের দারস্থ হয়েছি।’’ কালনার মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা আলিয়া বিবি। তাঁর ছেলে আলি হোসেন শেখের কথায়, ‘‘সামান্য কিছু জমি রয়েছে। তা নিয়েই টেনেটুনে সংসার চলে। মায়ের চিকিৎসার জন্য জমানো টাকা সবই শেষ হয়ে গিয়েছে। এর পর মাকে যদি নার্সিংহোম সুস্থ না করে ফিরিয়ে দেয়, তাহলে পরবর্তী চিকিৎসার কী হবে, তা ভেবে আমাদের ঘুম উড়েছে।’’ এ দিন নার্সিংহোমে অসুস্থ আলিয়া বলেন, ‘‘আট মাস ধরে যন্ত্রণা ভোগ করছি। এখন আমি সুস্থ হতে চাই।’’
রোগীর বাড়ির অভিযোগ মানতে নারাজ চিকিৎসক আব্দুস সামাদ। তিনি জানিয়েছেন, ওই রোগিণীর অন্ত্রে একটি টিউমার ছিল। সেটি অপারেশন করা জরুরি ছিল। তাই করা হয়েছিল। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের অস্ত্রোপচারে এক বিশেষ ধরনের সুতো ব্যবহার করা হয়। তবে এই সুতো কিছু কিছু রোগীর শরীর নিতে পারে না। ফলে সংক্রমণ ছড়ায়। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। ওই সুতো বের আমরা বের করে দিয়েছি।’’ চিকিৎসকের দাবি, বর্তমানে অস্ত্রোপচার করা জায়গার নীচের অংশে স্বল্প সংক্রমণ আলিয়া বিবি। তবে তিনি অনেকটাই সুস্থ। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পরেই তাঁকে নার্সিংহোম থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। রোগিণীর চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবারের বিপুল অর্থের খরচও অস্বীকার করেছেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘প্রথমে অস্ত্রোপচারের জন্য হাজার পনেরো টাকা দিয়েছিলেন ওঁরা। আরও হাজার পাঁচেক টাকার ওষধ কিনেছিলেন। এখন হঠাৎ দেড় লক্ষ টাকার কথা কেন বলা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’’