আউশগ্রাম, মেমারি, ভাতার, গলসি নিয়ে সরব বিজেপি, সিপিএম
Cyclone Amphan

ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় ‘দলবাজি’

ত্রাণ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের উপ-সচিব পর্যায়ের এক আধিকারিক জেলায় এসে সরেজমিন তদন্তও করবেন, জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ০০:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’-এ ক্ষতিগ্রস্তদের যে তালিকা তৈরি হয়েছে তাতে একাধিক বেনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, মুখ্যসচিবের নির্দেশের পরেও পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন ব্লকে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের প্রাথমিক তালিকা টাঙানো হয়নি। যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ জেলা প্রশাসন ও তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

জেলা প্রশাসনের দাবি, বাড়ি-বাড়ি পরীক্ষা করে তবেই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রত্যেক বিডিও-কে তালিকা টাঙানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। আর তৃণমূলের দাবি, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা যাতে তালিকা থেকে বাদ না যান তা দেখার জন্য জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। এখনও জেলা স্তরে কোনও অভিযোগ আসেনি।

জেলা প্রশাসনের দাবি, ‘আমপান’-এর পরে বিভিন্ন গ্রাম ও শহর থেকে বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে বলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে মৌখিক ও লিখিত আবেদন জমা পড়ে। আউশগ্রাম ২ ও গলসি ১ ব্লকে সব থেকে বেশি আবেদন জমা পড়েছিল। সম্পূর্ণ বাড়ি ক্ষতির আবেদন করেছিলেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাসিন্দা। আর আংশিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছিল ১২ হাজার পরিবার। কর্তাদের দাবি, এখনও আবেদন নেওয়া হচ্ছে। আবেদন দু’টি স্তরে খতিয়ে দেখার পরে, তবেই ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হচ্ছে। ত্রাণ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের উপ-সচিব পর্যায়ের এক আধিকারিক জেলায় এসে সরেজমিন তদন্তও করবেন, জানা গিয়েছে।

Advertisement

প্রশাসনের দাবি, প্রতিটি ব্লকে বিডিওকে মাথায় রেখে ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠন করা হয়েছে। রয়েছেন ওসি বা আইসি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিধায়কের প্রতিনিধি। এ ছাড়া, পঞ্চায়েত স্তরে বিডিও-র প্রতিনিধি, বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে চার সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। তাঁরা আবেদন সরেজমিন খতিয়ে দেখে মহকুমায় রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “মহকুমাশাসকের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং কমিটি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির এক সঙ্গে ছবি তুলে পাঠাতে হচ্ছে। সব খতিয়ে দেখার পরে নামের তালিকা করা হচ্ছে।’’

পূর্ব বর্ধমানে এখনও পর্যন্ত ১,২৯৮টি পরিবার বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া শুরু হয়েছে। আংশিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় ৮,৮০৮টি পরিবার রয়েছে। তাঁরা এককালীন পাঁচ হাজার টাকা করে পাবেন। তবে দেওয়া এখনও শুরু হয়নি। এ ছাড়া, কালনা মহকুমার কয়েকটি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পেয়ে গিয়েছেন, জানায় জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে।

বিরোধীদের যদিও অভিযোগ, ‘দলবাজি’ করতে গিয়ে আউশগ্রাম, মেমারি, ভাতার, গলসি ১-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন। বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর দাবি, “ক্ষতিগ্রস্তদের নাম ব্লকে টাঙানো হয়নি। ফলে, কারা ক্ষতিগ্রস্ত জানতে পারছি না। প্রশাসনের মুখাপেক্ষী না থেকে গৃহসম্পর্ক অভিযানের মাধ্যমে কোন-কোন ব্লকে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা বাদ গিয়েছেন, অথচ, শাসক দলের নেতাদের নাম রয়েছে—তার রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। ভাতার, আউশগ্রাম এলাকায় অভিযোগ রয়েছে।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যেরও দাবি, “ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পেতে তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) চিঠি করা হয়েছে।’’ কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় প্রকৃতদের নাম নেই, সে কথা জেলার সব বিডিওকে বলা হয়েছে।’’

যদিও জেলা পরিষদের সভাধিপতি, তৃণমূল নেত্রী শম্পা ধাড়ার দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা যাতে তালিকা থেকে বাদ না যান। সেই মতোই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সে কারণেই একটিও অভিযোগ আসেনি। বিরোধীরা অভিযোগ করতেই ব্যস্ত, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement