হেলমেট ছাড়াই সওয়ার। কালনায় সরস্বতী পুজোর সকালে। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল
ভিড়ে ভরা রাস্তায় গতির ঝড় উঠছে। আশপাশ কেঁপে উঠছে বিকট শব্দে। মোটরবাইকের এমন দাপটে প্রায়ই অতিষ্ঠ হতে হয় পথচারীদের। বেপরোয়া ভাবে সামনের গাড়িকে টপকে যাওয়া, সরু রাস্তাতেও তীব্র গতি, মাথায় হেলমেট না থাকা— অভিযোগের অন্ত নেই ওই সব বাইক চালকদের বিরুদ্ধে। বারবার সচেতনতার প্রচারেও কেন রোখা যাচ্ছে না এমন বেপরোয়া মনোভাব, সরস্বতী পুজোর প্রাক্কালে কালনার রাস্তায় বাইক দুর্ঘটনায় এক স্কুলছাত্রের মৃত্যুর পরে ফের উঠল সেই প্রশ্ন। রবিবার ওই ঘটনার পরেও সোমবার শহরের পথে মাথা ফাঁকা রেখে মোটরবাইকে এলাকায় দাপাতে দেখা গিয়েছে অনেক তরুণকেই।
কালনা শহরের সাহু সরকার মোড়, সিদ্ধেশ্বরী মোড়, স্টেশন রোড, আমলাপুকুর, ১০৮ শিবমন্দির রোড, ছোটদেউড়ি মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে সন্ধ্যার পর থেকেই মোটরবাইকের দাপাদাপি শুরু হয়। রাত পর্যন্ত তা চলে। দিনে আবার এমন দৌরাত্ম্য দেখা যায় কলেজ চত্বর-সহ কিছু এলাকায়। এমনিতেই কালনার বেশির ভাগ রাস্তা সংকীর্ণ। তাই বাইকের দাপটে নাভিশ্বাস ওঠে বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা পুতুল সরকারের কথায়, ‘‘অসাবধান হলেই গাড়ির চাকায় পড়ে প্রাণ যেতে পারে।’’
শহর লাগোয়া এসটিকেকে রোডেও অন্ধকারে নামলেই শুরু হয় বাইকের দাপাদাপি। বাসিন্দাদের দাবি, এই বাইক চালকদের অনেকেই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকেন। ছোটখাট দুর্ঘটনা তো বটেই, গত বছর দুয়েকে শহর ও লাগোয়া এলাকায় এমন দ্রুত গতির বাইকের জেরে দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী কিছু ছেলে নিয়মিত এ ভাবে বাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। উৎসবের সময়ে তা আরও বেড়ে যায়। অনেকের কাছে দামি মোটরবাইকও রয়েছে। শুধু গতি নয়, বাইক নিয়ে রাস্তায় নেমে নানা রকম কসরতও করে তারা।
দিনের বেলা বাইকের গতি নিয়ন্ত্রণ এবং লাইসেন্স, হেলমেট-সহ নানা বিষয় দেখার জন্য বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ নজরদারি চালায়। কিন্তু রাতে সেই নজরদারি ঢিলেঢালা থাকায় সেই সময়েই ওই বাইক আরোহীরা পথে নামে বলে অভিযোগ। কালনা পুরসভা সূত্রে জানা যায়, শহরে নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। শীঘ্রই আরও ৮০টি সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তুতি শুরু চলছে। সে জন্য মোটা অর্থ খরচ হচ্ছে। পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘শহর জুড়ে সিসি ক্যামেরাগুলি চালু হলে অনেক অপরাধ কমে যাবে। জোরে মোটরবাইক চালানো যুবকদের চিহ্নিত করাও সহজ হবে।’’
তবে চালক মদ্যপ কি না, তা যে যন্ত্রে বোঝা যায় সেই ‘ব্রিদ অ্যানালাইজার’ এখনও নেই কালনা মহকুমার পুলিশ-প্রশাসনের হাতে। এসডিপিও প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘‘ওই যন্ত্র জেলায় এসেছে। চেষ্টা চলছে মহকুমায় আনার। তা হাতে পেলেই অভিযান চালিয়ে চালকদের পরীক্ষা করা হবে।’’