পুরভোটের মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হল। সেই উপলক্ষে পুলিশি পাহারা দুর্গাপুরে মহকুমা প্রশাসনের ভবনে। নিজস্ব চিত্র
শাসকদল প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি এখনও। বামেরা বেশ কিছু আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও প্রার্থিপদ বণ্টন নিয়ে শরিক দলগুলির মধ্যে এখনও ঐকমত্য হয়নি। গুছিয়ে ময়দানে নামতে পারেনি অন্য বিরোধীরাও। পুরভোট ঘোষণার পরে সোমবার এমনই পরিস্থিতি দুর্গাপুরে।
শনিবার পুরসভার ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩০টি আসনে সিপিএম এবং একটি আসনে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বামফ্রন্ট। নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। ওই সভায় ফরোয়ার্ড ব্লকের এক প্রতিনিধিকে দেখা গেলেও ছিলেন না সিপিআই এবং আরএসপি-র কেউ। বাম নেতা-কর্মীরা জানান, ইদানীং শহরের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আরএসপি-কে সে ভাবে দেখা যায় না। কিন্তু অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে শ্রমিক আন্দোলন-সহ নানা কর্মসূচিতে সিপিআই থাকে। পুরসভার ৬, ২৬ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বরাবর সিপিআই প্রার্থী ভোটে লড়েছেন। এ বার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ড সিপিআইয়ের জন্য ছাড়া হয়েছে। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য এখনও কোনও দলের নাম নির্দিষ্ট করা হয়নি।
সিপিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে সিপিএমের সঙ্গে তিনটি বৈঠক হয়। সিপিআইয়ের তরফে তখন ২৬, ২৯ ও ৬ নম্বরের বদলে অন্য একটি ওয়ার্ড চাওয়া হয়। সিপিআইয়ের দুর্গাপুর লোকাল কাউন্সিলের সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘‘তৃণমূল ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের কার্যালয় দখল করে নিয়েছে। ওই ওয়ার্ডে সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ায় আমরা অন্য একটি ওয়ার্ড চেয়েছি। কিন্তু তা মানা হয়নি।’’ তিনি আরও জানান, তিনটি আসনেই সিপিআই প্রার্থী দেবে। তবে এখনও আলোচনার রাস্তা খোলা আছে বলে জানান তিনি।
এরই মধ্যে আলোচনা শেষ না করে একতরফা ভাবে বামেরা প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে তারা সব ওয়ার্ডেই প্রার্থী দেবেন বলে শহর কংগ্রেস নেতৃত্ব জানান। সিপিআইয়ের সুরেই কংগ্রেস জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোন আসনে কোন দল প্রার্থী দেবে, তা নিয়ে সিপিএমের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। তার মাঝেই একতরফা ভাবে সিপিএম তালিকা প্রকাশ করে দিল। এ ভাবে অসম্মান করার অধিকার ওদের কেউ দেয়নি।’’ শরিক দল সিপিআই বা কংগ্রেসের ক্ষোভ প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘শরিক দলের সঙ্গে খোলা মনে আলোচনা চলছে। কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে যা বলার, আমাদের রাজ্য সম্পাদক ইতিমধ্যে বলেছেন।’’
রামনবমীতে বড় মিছিল, শহরে মোদী মেলা থেকে বিস্তারক যোজনা— সম্প্রতি দুর্গাপুরে বিজেপি রাজনৈতিক কর্মসূচি বাড়িয়েছে। কিন্তু শহরে সংগঠন সে ভাবে এখনও গুছিয়ে ওঠা যায়নি বলে দলেরই একাংশের আক্ষেপ। সম্প্রতি দলের প্রবীণ নেতা অখিল মণ্ডল যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। ২০০২ সালে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছিল বিজেপি। তবে কাউন্সিলর বছর দুয়েক পরে সিপিআইয়ে যোগ দেন। ২০১২ সালে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী। তিনিও বছর তিনেক পরে তৃণমূলে যোগ দেন। এ বার ভোটের মাঠে এখনও সে ভাবে নামেনি বিজেপি। দলের আসানসোল জেলার অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক কল্যাণ দুবে অবশ্য বলেন, ‘‘প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে বৈঠক চলছে। দ্রুত প্রকাশ করা হবে।’’