ধুলো-ধোঁয়ায়: ঢাকা পড়ছে এলাকা। নিজস্ব চিত্র
আদালতের নির্দেশের পরেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেনি রেল। আর তার জেরেই এলাকার দীর্ঘ দিনের দূষণ-চিত্রে তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি, এমনই অভিযোগ আসানসোলের আপকার গার্ডেন এলাকার বাসিন্দাদের। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আসানসোলের মেয়রের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন বাসিন্দারা। রেল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, আসানসোল পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের আপকার গার্ডেন এলাকায় রেল সাইডিংয়ের এই দূষণ-সমস্যা দীর্ঘ দিনের। রেলের এই সাইডিংয়ে মূলত লৌহ আকরিক ও কয়লা তোলা-নামানো হয়। অভিযোগ, তার জেরেই গোটা এলাকায় ব্যাপক দূষণ ছড়াচ্ছে। তাঁদের দাবি, প্রতিদিন ঘরের মেঝে ও দেওয়ালে ধুলোর পুরু আস্তরণ পড়ে যায়। কিছু ক্ষণ আঢাকা রাখলেই চৌবাচ্চা বা বালতির জলেও ধুলোর পরত পড়ে। ধুলোয় ঢেকে যায় গোটা অঞ্চল। এলাকার গাছের পাতার রং পাল্টে ধূসর হয়ে গিয়েছে। এমনকী, সাদা ভাতও কালো হয়ে যায়। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, মাত্রাছাড়া দূষণের জেরে এলাকার বহু মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
ঘটনা হল, সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বাসিন্দারা বহু আন্দোলন করেছেন। তাঁরা একাধিক বার রাস্তা অবরোধ থেকে সাইডিংয়ের কাজকর্ম বন্ধ করে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। কিন্তু রেলের তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাসিন্দারা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলার রায়ে আদালত ওই এলাকায় দূষণ রোধে একাধিক নির্দেশিকা জারি করে। বাসিন্দাদের দাবি, সেই নির্দেশ পালনের পাশাপাশি রেল কর্তৃপক্ষের তরফে দূষণ রোধে আরও দু’টি সাইডিং তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, আসানসোলের বরাচক ও জামুড়িয়ার তপসিতে ওই সাইডিং তৈরি করে কয়লা, লোহা আকর-সহ দূষণের জন্য দায়ী পণ্যগুলি তোলা-নামানো হবে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করেনি রেল। আপকার গার্ডেন থেকে এখনও কয়লা ও লোহা-আকর তোলা-নামানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ছেটানোও হচ্ছে না। ফলে, পরিবেশ দূষিত হচ্ছেই।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আপকার গার্ডেন রেল সাইডিংয়ের দূষণ রোধ করতে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে গাছ লাগিয়েছি। নিয়মিত জল ছেটানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, দূষণ ছড়ায় এমন পণ্য বরাচক ও তপসি রেল সাইডিংয়ে তোলা-নামানোর ব্যবস্থাও হচ্ছে। তার পরেও এলাকায় দূষণ ছড়ানোর যে অভিযোগ উঠছে, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রেলের ওই আধিকারিক। মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি অবশ্য বলেন, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’