সিএলডব্লিউ। ছবি: পাপন চৌধুরী
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নামে রয়েছে রেল ইঞ্জিন কারখানা, পশ্চিম বর্ধমানের চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (সিএলডব্লিউ)। এই কারখানাটি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে করার দাবি জানালেন আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। অগ্নিমিত্রার এই দাবি সামনে আসার পরেই বিজেপির বিরুদ্ধে ‘নামবদলের রাজনীতি’ করার অভিযোগ করেছেন বিরোধী নেতৃত্ব। যদিও, অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
সম্প্রতি কারখানার জেনারেল ম্যানেজার সতীশকুমার কাশ্যপের সঙ্গে দেখা করেন অগ্নিমিত্রা। সেখানেই অগ্নিমিত্রা ওই দাবি জানান। বিতর্ক তৈরি হতেই অগ্নিমিত্রার ব্যাখ্যা, “স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রথম বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এই কারখানা তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু রেল শহরে তাঁর কণামাত্র চিহ্ন নেই। তাই আমি চেয়েছি, কারখানার নাম শ্যামাপ্রসাদের নামে করা হোক। শহরের নাম চিত্তরঞ্জন দাশের নামেই থাকুক।” ঘটনা হল, শ্যামাপ্রসাদ স্বাধীনতার পরে থেকে ৬ এপ্রিল, ১৯৫০ পর্যন্ত ওই মন্ত্রকের মন্ত্রী ছিলেন। কারখানার উদ্বোধন হয় ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০-এ। এই বিষয়টি উস্কে দিয়েই অগ্নিমিত্রার দাবি, “শহরে শ্যামাপ্রসাদ ও চিত্তরঞ্জনের পূর্ণাবয়ব মূর্তি তৈরি করা হোক।” এই ব্যবস্থা নেওয়া হলে দুই মনীষীকেই উপযুক্ত সম্মান জানানো হবে বলে বিধায়ক মনে করেন। তবে কারখানাটির উদ্বোধন করেছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তীদেবী।
এ দিকে, অগ্নিমিত্রার এই দাবি প্রকাশ্যে আসার পরেই তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক বিতর্ক। আইএনটিইউসি নেতা ইন্দ্রজিৎ সিংহ বলেন, “সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে এই কারখানা চিত্তরঞ্জনের নামে পরিচিত। রাতারাতি নাম বদলের এই দাবি আমরা মানছি না।” সিটু নেতা রাজীব গুপ্তেরও বক্তব্য, “এটা নাম বদলের রাজনীতি। আমরা এটা মানব না।” অগ্নিমিত্রা গত মঙ্গলবার ওই দাবি জানানোর পরেই চিত্তরঞ্জন রেল শহরে এসে স্থানীয়দের সঙ্গে দেখা করেন বারাবনির তৃণমূল বিধায়ক তথা আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাব। পুরনো যা কিছু আছে, সেটা দেশের ঐতিহ্য। বিজেপি নতুন কিছু তৈরি করে যা খুশি নাম দিক।”
পাশাপাশি, বিরোধীদের অভিযোগ, মোগলসরাই স্টেশন থেকে কলকাতা বন্দর, দেশের নানা ঐতিহ্যের নাম বদল করেছে বিজেপি।আদতে এ সবের মাধ্যমে বিজেপি রাজনীতিকেই সামনে আসছে। যদিও, অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে’র প্রতিক্রিয়া, “দিল্লির কনট প্লেসকে রাজীব গান্ধী চক করেছে কংগ্রেস। পাশাপাশি, ২০১২-য় তৎকালীন ইউপিএ সরকার সংসদে জানিয়েছিল, ৫৮টি কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের মধ্যে ১৬টিই হল ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর নামে। আর রাজ্যে বাম জমানায় বহু রাস্তাঘাটের নাম লেনিন-মার্ক্সের নামে করা হয়েছে। তৃণমূলেরও এ বিষয়ে কথা না বলাই ভাল।”
এ দিকে, অগ্নিমিত্রার দাবিটি প্রসঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে শহর চিত্তরঞ্জনে। প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক তথা সাহিত্যিক অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “যাঁর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে কারখানা তৈরি হয়েছে, তাঁর নামে কারখানার নামকরণ হলে আপত্তির কারণ দেখছি না।” তবে চিত্তরঞ্জনের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অখিল মজুমদারের বক্তব্য, “সাত দশকের স্মৃতিকে মুছে দিয়ে কী এমন মহৎ কাজ করা হবে, তা বোধগম্য হচ্ছে না।”