ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ, পঞ্চায়েতে তালা

প্রশাসনের আধিকারিক থেকে নেতা-মন্ত্রী, বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা মিলছে সবারই। কিন্তু জননেতাদের দেখে আমজনতা আশ্বাস কতটা পাচ্ছেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সোমবার দুপুরে বর্ধমান সদরে জেলাশাসকের অফিসে এসে একটি বৈঠক করেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৮
Share:

চলছে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

প্রশাসনের আধিকারিক থেকে নেতা-মন্ত্রী, বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা মিলছে সবারই। কিন্তু জননেতাদের দেখে আমজনতা আশ্বাস কতটা পাচ্ছেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

Advertisement

সোমবার দুপুরে বর্ধমান সদরে জেলাশাসকের অফিসে এসে একটি বৈঠক করেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ছিলেন আরও তিন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, মলয় ঘটক ও রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। বৈঠকের পরে জেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরেও দেখেন মন্ত্রীরা। অরূপবাবু প্রথমে রওনা দেন নানদনঘাটের একটি ত্রাণ শিবিরে। সেখান থেকে নাদনঘাটে ঘর হারিয়ে উঁচু সেতুর উপর আশ্রয় নেওয়া আশপাশের গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তারপর যান নান্দাই পঞ্চায়েতের নতুনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে মিনিট পনেরো কাটিয়ে চলে যান পূর্বস্থলীতে। পূর্বস্থলীর ৮টি ত্রাণ শিবিরের রান্না হচ্ছে যেখানে সেখান যান মন্ত্রী। বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেন। মন্ত্রী যে সমস্ত শিবিরে যান সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন বিশেষ অভিযোগ না জানালেও ত্রাণ না বিক্ষোভ হয় বহু জায়গাতেই।

কালনা ১ ব্লকের কৃষ্ণদেবপুরে ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগে পঞ্চায়েত ভবনে প্রধানের সামনেই তালা ঝোলান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাববি, না খাবার মিলছে, না ত্রিপল বা অন্য সুবিধা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ কাছাকাছি ত্রাণ শিবির থেকে প্রায় দেড়শো মানুষ পঞ্চায়েত ভবনের সামনে হাজির হন। তাঁদের দাবি, এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ২০০ টি পরিবারকে এলাকার বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। উপায় না থাকায় উঁচু ইটভাটায় গিয়েও আশ্রয় নিতে হয়েছে বেশ কিছু বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতিতেও ত্রাণ শিবিরে খাবার পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। ক্ষুব্ধ ওই বাসিন্দারা পঞ্চায়েত ভবনে ওঠার মুখে সিঁড়িতে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পঞ্চায়েত ভবনের সামনে বিক্ষোভরত কালীপদ মণ্ডল, কার্তিক ধারারা জানান, শিবিরে থাকলেও মেলেনি ত্রাণ। কৃষ্ণদেবপুর পঞ্চায়েতের পিয়ারিনগর গ্রামের বাসিন্দা মহিউদ্দিন শেখ, জোসিবুল শেখদেরও অভিযোগ, ‘‘জমা জলে ডুবেছে ঘর বাড়ি। শিবিরে এসে না খাবার, না ত্রিপল মিলেছে।’’ ঘটনার সময় পঞ্চায়েত ভবনে হাজির ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান বিপুল মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘যে টুকু আসছে বিলি করে দিচ্ছি। আমি বেশী না পেলে কোথা থেকে দেব।’’

Advertisement

মন্তেশ্বরের ‌আমাটিয়া গ্রামে রাস্তা ভেঙে বহু মানুষ বিপদে। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে সমস্ত রকম সাহায্য মিলছে না। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের গোয়ালপাড়ার একটি ত্রাণ শিবিরেও খাবার না মেলার অভিযোগ ওঠে। গোয়ালপাড়ার বেশ কিছু বাসিন্দাকেও জল ঢুকে যাওয়ায় তুলে নিয়ে আসা হয়েছে স্থানীয় সুজননগর বলাইচন্দ্র পাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানকার হুমায়ুন শেখের দাবি, ‘‘একে তো আধপেটা খাবার পাচ্ছি। তার উপর পানীয় জল ও শৌচাগারেরও অসুবিধা রয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেউ এলে বলতে পারতাম অসুবিধাগুলো।’’

জেলা কংগ্রেস সভাপতি (গ্রামীণ) আভাস ভট্টাচার্যও এ দিন জেলাশাসকের কাছে ত্রান বিলি নিয়ে প্রশাসনিক বৈষম্যের লিখিত অভিযোগ করেছেন। সরকারি ভাবে বর্ধমান জেলাকে বন্যা কবলিত জেলা বলে ঘোষণা করার দাবিও জানিয়েছেন তিনি। এসইউসি ইয়ের পক্ষ থেকেও জেলাশাসককে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে ত্রিপল ও খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করতে হবে। বিপর্যস্ত এলাকা কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও সমস্ত রকমের কৃষিঋণ মকুব করারও দাবি তুলেছেন তাঁরা। ক্ষতিগ্রস্তদের বিদ্যুৎ বিলও মকুব করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দলের নেত্রী ঝর্না পাল। যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি, সমস্ত রকমের সাহায্য করা হচ্ছে বন্যা দুর্গতদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement