টান: খুদেদের সঙ্গে সুভাষবাবু। নিজস্ব চিত্র
স্কুলের বিশেষ রকমের গ্রিলে কোথাও লেখা ‘ক, খ..’, কোথাও বা ‘১, ২..’। তা দেখিয়ে খুদে পড়ুয়াদের নিয়ম করে বর্ণমালা, নামতা শেখান মাস্টারমশাই। সরকারি খাতায় সেই মাস্টারমশাই অবশ্য প্রাক্তন। কিন্তু তা বলে স্কুলে আসায় ফাঁকি নেই। তিনি, কাটোয়ার মণ্ডলহাট জেএস এফপি স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুভাষরঞ্জন সরকার চৌধুরী।
দাঁইহাটের পাতাইচণ্ডীতলার বাসিন্দা, বছর বাষট্টির সুভাষবাবু তেরো বছর পড়িয়েছেন এই স্কুলে। ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে অবসর নেন। কিন্তু স্কুলের টান কাটাতে পারেননি। এখন অবশ্য সপ্তাহে তিন দিন স্কুলে আসেন তিনি।
এখন ক্লাসে না গেলেও বাগানের পরিচর্যায় সুভাষবাবুকে নিয়মিতই দেখা যায় বলে জানান স্কুলের শিক্ষক বিশ্বপ্রিয় দেবনাথ, সোনালি ঘোষেরা। বাগানে কালমেঘ, ব্রাহ্মী-সহ নানা রকমের ভেষজ গাছের চারা লাগানো, জল দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার-সহ নানা কাজও করেন সুভাষবাবু। সোমবার, শিক্ষক দিবসের আগের দিন স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, তিনি দু’টি নতুন চারা পুঁতেছেন, সেগুনের। সঙ্গী পড়ুয়ারা। বুঝিয়ে দিলেন গাছটির উপকারিতা।
কেন এমনটা? জিজ্ঞেস করতেই সুভাষবাবু আওড়ালেন ‘সহজ পাঠ’— ‘শিউলির ডালে কুড়ি ভ’রে এল, / টগর ফুটিল মেলা, / মালতীলতায় খোঁজ নিয়ে যায়/ মৌমাছি দুই বেলা।’ তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেমেয়েরা শিউলি, টগর, মালতীলতা না চিনলে কী ভাবে পড়া মনে রাখবে?’’
নানা রকম ফলের গাছ থেকে মিড-ডে মিলের খাবারও দেওয়া হয় খুদেদের। খাওয়ার আগে পড়ুয়াদের পরিচ্ছন্নতার পাঠ দেওয়া, স্কুলের ‘অভিযোগ বাক্স’টি পরীক্ষা করার মতো দায়িত্ব এখনও পালন করে চলেন এই শিক্ষক। স্কুলে থাকাকালীন শিক্ষকদের জন্য সচিত্র পরিচয়পত্র তৈরি করেছিলেন সুভাষবাবু।
বাড়িতে, স্ত্রী মমতাদেবী ও দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। মমতাদেবী বলেন, ‘‘স্কুলে গেলেই উনি ভাল থাকেন।’’ স্কুলের শিক্ষকেরাও মুগ্ধ প্রাক্তন প্রধান শিক্ষকের এই কাজকর্মে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাজা বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্কুলের যে কোনও বিষয়েই ওঁর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিই।’’ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া পল্লবী দত্ত, সৌরভ দেবনাথরা বলে, ‘‘স্যার এলে বাগানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুব মজা করে পড়া যায়।’’