ফিরল আগের নাম। নিজস্ব চিত্র।
এক দশকের বেশি সময় প্ল্যাটফর্মের বোর্ডে স্টেশনের নাম লেখা ছিল না। কারণ কী নাম লেখা হবে, তা নিয়ে ছিল বিতর্ক। ‘রায়না’ নাকি ‘রায়নগর’— তা নিয়েই ছিল প্রশ্ন। স্থানীয়দের দাবি ছিল, স্টেশন যেহেতু রায়না মৌজায় অবস্থিত, সে কারণে স্টেশনের নাম করতে হবে রায়না। সে দাবিতেই প্ল্যাটফর্মের বোর্ড থেকে নাম মুছে দেন স্থানীয়দের একাংশ। স্টেশন হয়ে পড়ে ‘নামহীন’। ১২ বছর পরে ফের নাম ফিরল স্টেশনের। তবে বহাল রইল পুরনো নামই— ‘রায়নগর’।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বাঁকুড়া থেকে মশাগ্রাম পর্যন্ত এক সময়ে ন্যারোগেজ লাইনে ট্রেন চলত। ১৯৯৮ সালে রেল এই লাইনটি ব্রডগেজ করার পরিকল্পনা নেয়। তিন ধাপে কাজ হয়। প্রথমে বাঁকুড়া থেকে সোনামুখী, তার পরে সোনামুখী থেকে রায়নগর এবং শেষে রায়নগর থেকে বর্ধমান হাওড়া কর্ডলাইনের মশাগ্রাম পর্যন্ত এই লাইন সম্প্রসারিত হয়। ২০০৮ সালে রায়নগর পর্যন্ত লাইনে যাত্রী পরিবহণ শুরু হয়। সে থেকেই শুরু বিতর্ক।
স্থানীয়দের একাংশ স্টেশনের নামকরণ নিয়ে আপত্তি তোলেন। তাঁদের দাবি ছিল, স্টেশন রায়না মৌজায় যখন অবস্থিত, তখন নাম করতে হবে রায়না। তা ছাড়া, সেখানকার ব্লক, পঞ্চায়েত সমিতি, বিধানসভা কেন্দ্র, থানা— সব কিছুর নামই রায়না। স্থানীয়দের দাবি, বছর দু’য়েক এই নাম নিয়ে আন্দোলনের পরে, কিছু লোকজন প্ল্যাটফর্মের বোর্ডে লেখা রায়নগর নাম মুছে দেন। তারপরে গত ১২ বছর ‘নামহীন’ থেকে গিয়েছিল স্টেশন। তবে যাত্রীদের রায়নগর স্টেশন লেখা টিকিটইদেওয়া হত।
এলাকাবাসীর দাবি, রায়না এলাকায় রায়নগর নামে একটি গ্রাম রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সেই থেকেই রায়না নাম এসেছে। কথিত রয়েছে, সেখানে ছিল রায়দের রাজবাড়ি। আবার কারও কারও দাবি, এলাকায় ‘রায়খাত’ নামে এক দিঘির নাম থেকেই রায়নার নাম এসেছে। এই জটিলতার মধ্যেই স্টেশনের নাম হয়ে যায় ‘রায়নগর’।
মাসখানেক আগে, আবার প্ল্যাটফর্মের বোর্ডে রায়নগর ফেরত এসেছে। যদিও তার পরে কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামনে আসেনি। তবে রায়না কেন্দ্রের বিধায়ক তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বলেন, ‘‘রায়নগর বলে একটি জায়গা থাকলেও সেটি বিশেষ পরিচিত নয়। স্টেশনটি রায়না বললেই সবাই চিনবেন। আমরা তাই স্টেশনের নাম রায়না চেয়েছিলাম। কিন্তু ফের রায়নগর লেখা হয়েছে বলে জেনেছি। আমরা নাম পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট জায়গায় চিঠি করব।’’
স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস ধাড়া, সুব্রত সরকার বলেন, ‘‘প্রায় ১২ বছর স্টেশন নামহীন ছিল। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও চর্চা হয়। কিন্তু একই নাম বহাল রাখা হয়েছে। স্টেশনের নাম রায়না হলেই ভাল হত।’’ তাঁদের ক্ষোভ, নাম ফিরলেও শ্রী ফেরেনি স্টেশনের। পানীয় জল, বাথরুম-সহ অন্য পরিকাঠামো উন্নত করা দরকার।
তবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কে এস আনন্দ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার আমাদের স্টেশনের নাম বাংলা, ইংরেজি এবং হিন্দি হরফে লিখে পাঠায়। সে নাম প্ল্যাটফর্মে লেখা হয়। এ ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। রাজ্য সরকারের ঠিক করে দেওয়া নামই আমরা লিখেছি।’’