চটকলের সামনে বিধায়কের বক্তব্য। নিজস্ব চিত্র।
দু’দিন ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলের চটকলে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়ে বিধায়ক (বর্ধমান উত্তর) নিশীথ মালিকের বিরুদ্ধে শ্রমিক-বিক্ষোভে মদত দেওয়ার অভিযোগ করেন ‘শক্তিগড় টেক্সটাইল ও ইন্ডাস্ট্রিজ়’ কর্তৃপক্ষ। বুধবার দুপুরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে চালু হয়ে গেল ওই চটকল। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়াঙ্কা সিংলাও বলেন, ‘‘বুধবার দুপুর থেকে ওই চটকলে উৎপাদন শুরু হয়েছে।’’
এ দিন দুপুরে চটকলের মূল দরজায় কর্মীদের বিক্ষোভ সমাবেশে গিয়েছিলেন বিধায়ক। তাঁর দাবি, ‘‘আমার নামে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আমি চাই, আমাদের এলাকার এই কারখানা সুন্দর ভাবে চলুক। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এখানে আমি ছুটে এসেছি। শ্রমিকদের অনুরোধ করব, উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে কাজে যোগ দিতে।’’ বিধায়কের সঙ্গে আলোচনার পরে, কারখানা কর্তৃপক্ষ একটি নোটিস দেন। তাতে জানানো হয়, ১১ তারিখ দুপুর থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বুধবার দুপুর থেকে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে আবেদন জানানো হচ্ছে। চটকল সূত্রে জানা যায়, এ দিন দুপুর থেকে আংশিক ভাবে চটকলের কাজ শুরু হয়েছে। কাজে আসার জন্য শ্রমিকদের মেসেজ করছেন কর্তৃপক্ষ। মাইকেও প্রচার করা হয়েছে।
চটকল সূত্রে জানা যায়, গত ১১ জুলাই ওই চটকলের আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত শ্রমিক ইউনিয়নের পাঁচ জনের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে সহকারী শ্রম কমিশনার (বর্ধমান উত্তর) আগামী তিন বছরের মজুরি ঠিক করেন। ইউনিয়ন মানেন না দাবি করে কয়েকজন শ্রমিক চটকলের দরজায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। নতুন করে শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে চুক্তি করার দাবি তোলেন তাঁরা।
বর্ধমান ২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা ওই চটকলের আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি অম্বিকা দাস বলেন, ‘‘সংগঠন আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা পাঁচ জন চুক্তিতে সই করেছি। কিন্তু সংগঠনকে বাদ দিয়ে বিধায়ক নিজের স্বার্থে শ্রমিকদের উস্কে দেন। অহেতুক উৎপাদন বন্ধ রেখে বিধায়ক শ্রমিকদেরই ক্ষতি করলেন।’’ বিধায়কের যদিও দাবি, ‘‘ওই পাঁচ জন কারখানার মালিকের দালাল। তাই শ্রমিকেরা নিজেদের ইউনিয়নের দাবি তুলেছেন। সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে।’’
এর পরেই চটকলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী ও জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানান সঞ্জয় কাজোরিয়া। বুধবার বিকেলে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে চটকল চালু করা সম্ভব হয়েছে। ধীরে ধীরে উৎপাদনও স্বাভাবিক হবে।’’ মঙ্গলবার তিনি দাবি করেছিলেন, দেশের মধ্যে সফল জুট-পার্ক হল শক্তিগড়। এখানে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার কর্মী প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ করেন। তাঁর অভিযোগ, এমন সফল সংস্থার মূল দরজার সামনে বিধায়ক (বর্ধমান উত্তর) নিশীথ মালিকের মদতে চটকলের মূল দরজা আটকে বিক্ষোভ চলছে। আইএনটিটিইউসির নিবন্ধীকৃত ইউনিয়নের বদলে বিধায়ক নিজের গোষ্ঠীর লোকেদের নিয়ে ইউনিয়ন করতে চাইছেন বলেও দাবি করা হয়। ওই চিঠিতে আরও দাবি করা হয়, জাপানের একটি ক্রেতা-দল চটকলে এসে ধর্মঘটের মুখে পড়েছেন। দার্জিলিংয়ে বসে ওই খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি দেখার জন্য মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেন। তাঁর কাছ থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশপান নিশীথ।