মঙ্গলকোটে ফিরছেন সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা। নিজস্ব চিত্র।
ভোটের মুখে প্রায় পাঁচ বছর পরে ঘরে ফিরলেন সিপিএমের ২২ জন কর্মী-সমর্থক। তৃণমূলের অত্যাচারে এঁরা এত দিন ঘর ছাড়া ছিলেন বলে অভিযোগ। সকলেরই বাড়ি মঙ্গলকোট ও বক্সিনগর এলাকায়।
সোমবার দুপুরে পুলিশি নিরাপত্তায় মঙ্গলকোটের ১২ জন ও বক্সিনগরের ১০ জনকে বাড়িতে ফেরানো হয়। এই কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ফেরানোর জন্য সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক বেশ কয়েকবার বর্ধমান জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিলেন। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন ও পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল ওই দুটি গ্রামে গিয়ে ঘর ছাড়া পরিবারদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই পরিবারগুলিকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছিলেন, দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, “সিপিএমের তরফে বর্ধমানের ৮টি থানার ৬৭ জন ঘরছাড়ার তালিকা দেওয়া হয়েছিল। সাতটি থানার গ্রামছাড়ারা আগেই ঘরে ঢুকে গিয়েছেন। মঙ্গলোকোটেও ১১ ফেব্রুয়ারি বেশ কয়েক জন ঢোকে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকিদের ঘরে ফেরাতে বেশ কয়েক বার দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। কিন্তু ঘর ছাড়ারাই ওই দিনে ফিরতে চাননি বলে পুলিশের দাবি। শেষ পর্যন্ত সোমবার স্থির হয়।
এ দিন দুপুর থেকে মঙ্গলকোটের বিস্তীর্ণ এলাকা নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়। এসডিপিও (কাটোয়া) শচীন মাঁকড়, মঙ্গলকোটের ওসি পার্থ ঘোষের নেতৃত্বে ঘর ছাড়াদের বাড়িতে ঢুকিয়ে দেয় কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২২ জনের মধ্যে বেশির ভাগ জনের নামেই খুন-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েক জন জেল হেফাজতেও ছিলেন।
মঙ্গলকোটে সিপিএম জিতলেও, গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূলের ‘দাপটে’ তাঁরা গ্রামে ঢুকতে পারেননি বলে অভিযোগ। সিপিএমের আরও অভিযোগ, তৃণমূলের অত্যাচারে অনেক সাধারণ সমর্থকও গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন। পঞ্চায়েত তো বটেই, লোকসভা ভোটেও তাঁদেরকে গ্রামে ঢোকাতে পারেনি প্রশাসন। এমনকী, গত ডিসেম্বরে এক ঘরছাড়া পরিবার কাটোয়া বাসস্ট্যান্ডে মেয়ের বিয়ে দেন। এ দিন দুপুরে কৈচরে সিপিএমের মঙ্গলকোট জোনাল কমিটির দফতর থেকে ঘরছাড়াদের গ্রামে নিয়ে যায় পুলিশ।
দেরিতে হলেও প্রশাসন সক্রিয় হওয়ায় মঙ্গলকোটের সিপিএমের প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী খুশি। মঙ্গলকোটের তৃণমূল প্রার্থী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, “প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সিপিএমের লোকেদের গ্রাম ছাড়াদের বাড়ি ফেরানোয় আমাদের কোনও সমস্যা নেই। মঙ্গলকোটের মানুষ শান্তিতে থাকতে চান।”
ভোটের মঙ্গলকোটে সেই শান্তি বজায় থাকবে তো? বলবে সময়।