প্রতীকী ছবি।
ধান বিক্রির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নথিবদ্ধ মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে চাষির কাছ থেকে জানতে চাওয়া হবে, তিনি ধান বিক্রি করেছেন কি না? উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে তবেই সহায়ক মূল্যে ধানের দাম মেটাতে উদ্যোগী হবে খাদ্য দফতর। মঙ্গলবার খাদ্য ভবনে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, চালকল মালিক, দফতরের আধিকারিকদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বুধবার খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করেছেন, এমন প্রতিটি চাষির কাছে মেসেজ যাবে। তিনি যে পরিমাণ ধান বিক্রি করেছেন, তা উল্লেখ করে জানতে চাওয়া হবে। উপযুক্ত উত্তর পেলে দাম মেটানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। উত্তর ‘না’ হলে, তদন্ত করে দেখা হবে।’’ খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরই চাষির কাছ থেকে ধান কিনে কিছু ফড়ে সহায়ক মূল্যে তা বিক্রি করে বলে অভিযোগ ওঠে। বিক্রির সময়ে নথিপত্র চাষিদের দেওয়া হয়, কিন্তু অ্যাকাউন্ট নম্বর থাকে ফড়েদের। এ বার আবার পুরনো রেজিস্ট্রেশনেই সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন চাষিরা। ধান বিক্রি করতে প্রকৃত চাষিরা বঞ্চিত হচ্ছেন, এই অভিযোগ যাতে না ওঠে, সে জন্যই এমন উদ্যোগ বলে কৃষি-কর্তাদের দাবি। দফতর সূত্রে জানা যায়, তিনটি মোবাইল পরিষেবা সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। দু’টি সংস্থাকে কাজের বরাত দেওয়া হবে।
গত মরসুমে রাজ্যে প্রায় ২৫ লক্ষ চাষির কাছে ৫২ লক্ষ টন ধান কিনেছিল রাজ্য সরকার। এ বছরও লক্ষ্যমাত্রা একই। খাতায়-কলমে সোমবার থেকে রাজ্যের ৩৫০টি কেন্দ্রে ধান কেনা শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত অনেক জায়গায় জমি থেকে ধান তোলা হলেও ঝাড়া শেষ হয়নি। সে কারণে ধান কেনার প্রক্রিয়া পুরোপুরি শুরু হয়নি। এ দিকে, চালকল নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল তা অনেকটাই কেটেছে বলে প্রশাসন সূত্রের দাবি। চালকল মালিকদের দু’টি বিষয়ে আপত্তি ছিল। প্রথমত, ৫০০ টনের উপরে ধান নিলে ‘ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি’ দেওয়া বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয়ত, ভিন্-জেলায় চাল দিলে তিন মাসের মধ্যে খারাপ হয়ে গেলে চালকলকে পাল্টে দিতে হবে। এ ছাড়া, পরিবহণ খরচ মেটানোর দাবি ছিল চালকল মালিকদের। ‘বর্ধমান রাইসমিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ জানায়, পূর্ব বর্ধমানে ৫ লক্ষ ৭০ হাজার টন ধান কেনা হয়। তার মধ্যে চার লক্ষ টনের চাল পাঠানো হয় আটটি জেলায়। পরিবহণ খরচ বাবদই তাঁদের পাওনা ৩৬ কোটি টাকা। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পরিবহণ খরচ দ্রুত মেটানো হবে। ‘ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি’র সমস্যাও মিটে গিয়েছে।’’
দফতর সূত্রে জানা যায়, ২৪ নভেম্বরের মধ্যে চুক্তি করলে চালকলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। তবে চাল বদলানোর বিষয়ে আপত্তি মানেননি খাদ্য দফতরের কর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, গত মরসুমে ২৬ হাজার টন চাল বদলাতে হয়েছে। চালকল মালিক সংগঠনের রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘সুষ্ঠু আলোচনায় সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। সহায়ক মূল্যে ধান নিতে আমাদের অসুবিধা হবে না।’’