অনুমতি ছাড়াই চলে বহু টোটো। নিজস্ব চিত্র
জেলার রাস্তায় বেআইনি ভাবে চলা টোটো আটকাতে মাঝে-মধ্যেই ধরপাকড় চলে। তার পরে ফের রাস্তায় দেখা যায় টোটোর দৌরাত্ম্য, অভিযোগ বাস-অটোর চালকদের। টোটোর এই দাপট মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের কাছে। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে, টোটো নয়, রাস্তায় চলবে ই-রিকশা। আসানসোলে ই-রিকশার অনুমোদন দেওয়া শুরুও হয়েছে। আগে যাঁরা টোটো চালানোর অনুমতি পেয়েছিলেন, আপাতত ই-রিকশার অনুমোদন পাচ্ছেন তাঁরাই। জেলায় তিনটি ই-রিকশার শো-রুম খোলার সিদ্ধান্তও হয়েছে। তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে টোটো চালকদের মধ্যে।
দুর্গাপুরে ২০১৩ সালের শেষ দিকে টোটো চালু হয়। ব্যাটারিচালিত হওয়ায় খরচ কম। ফলে, লাভ বেশি। তাই টোটোর সংখ্যা বাড়তে থাকে। শহরে কত টোটো চলে তা নথিবদ্ধ করতে ২০১৫ সালে দুর্গাপুর পুরসভা টোটোগুলিকে টেম্পোরারি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) দিতে শুরু করে। মোট ৭৫৯টি টোটো নথিভুক্ত হয়। ২০১৬ সালে টোটো বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। টোটোর শো-রুম বন্ধে অভিযান চলে। তবু ‘টিন’ ছাড়া হাজার দেড়েক টোটো শহরে চলছে বলে অভিযোগ।
আসানসোল মহকুমায় টোটো চলাচল শুরু হয় ২০১৪ সালে। প্রথমে শুধু রানিগঞ্জ শহরে শুরু হলেও পরে আসানসোল, কুলটি, জামুড়িয়া-সহ মহকুমার নানা প্রান্তে টোটোর রমরমা বাড়ে। আসানসোলেও পুরসভার উদ্যোগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে টোটো চালকদের ‘টিন’ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক ভাবে এক হাজার টোটোকে ‘টিন’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা নিয়েছিলেন মাত্র ৮৭২ জন টোটো চালক। এ ছাড়াও কয়েক হাজার টোটো এলাকায় চলে বলে অভিযোগ।
প্রথম থেকেই টোটোর বিরোধিতায় নামে মিনিবাস মালিকদের সংগঠন। কারণ, টোটোগুলি মিনিবাসের রুটে চলতে শুরু করায় তাদের যাত্রী কমতে থাকে। এর পরে বিরোধিতায় নামেন অটো চালকেরাও। কারণ, টোটো অনেক কম ভাড়ায় যাত্রী বহন করায় তাঁরাও কম যাত্রী পেতে শুরু করেন। এ নিয়ে প্রায়ই গোলমাল বাধছিল অটো ও টোটো চালকদের মধ্যে। অনুমোদনহীন টোটো চলার বিরোধিতা করেন ‘টিন’ নেওয়া টোটোর চালকদের অনেকেও। আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত টোটো চালকদের সংগঠন ‘দুর্গাপুর ই-রিকশা ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’-র সম্পাদক অশোক বড়ুয়ার প্রস্তাব, ‘‘নম্বরহীন টোটোগুলি প্রান্তিক রুটে চলুক। গ্রামীণ এলাকায় যোগাযোগের সুবিধা হবে।’’
এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি আসানসোলে ই-রিকশার অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোলে যে ৮৭২ জন টোটো চালক ‘টিন’ নিয়েছিলেন, আপাতত তাঁদের ই-রিকশার অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে ওই টোটো চালকদের পুরনো টোটো নষ্ট করে ফেলতে হবে। ই-রিকশার লাইসেন্স নিয়ে তাঁরা রাস্তায় টোটো চালাতে পারবেন না। প্রাথমিক ভাবে আসানসোলে দু’টি ও দুর্গাপুরে একটি ই-রিকশার শো-রুম খোলা হচ্ছে। সেখান থেকে সরকার নির্দেশিত নিয়ম মেনে ই-রিকশা বিক্রি হচ্ছে কি না, তা পরিবহণ দফতরের ইনস্পেক্টররা নজর রাখবেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ই-রিকশার লাইসেন্স পেতে প্রথমে পরিবহণ দফতরে আবেদন করতে হবে। অনুমোদনের পরে আবেদনকারীকে ই-রিকশা চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে লাইসেন্স মিলবে। জেলা পরিবহণ আধিকারিক পুলকরঞ্জন দাসমুন্সি বলেন, ‘‘এখন আবেদনপত্র জমার প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত এই প্রক্রিয়া শেষ করে রাস্তায় ই-রিকশা নামানো হবে।’’
ই-রিকশার অনুমোদন শুরুর প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানালেও আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায়ের প্রশ্ন, ‘‘বাসের রুটে টোটো চলাচল এ বার বন্ধ হবে তো?’’ কী ভাবে ই-রিকশায় পরিবর্তন হবে, সমস্ত টোটোকেই এর আওতায় আনা হবে কি না, ই-রিকশার সুবিধাই বা কী— এমন নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে টোটো চালকদের মধ্যেও।