তৈরি হচ্ছে পার্ক, রিসর্ট। নিজস্ব চিত্র
জেলার নানা প্রান্তে পর্যটন কেন্দ্রগুলির মানোন্নয়ন হোক, দীর্ঘদিন ধরে দাবি এলাকাবাসীর। কিন্তু দুর্গাপুরের ‘রিভিয়েরা’ বাংলো হোক বা বারাবনির পানিফলা, পর্যটন-চিত্র মোটেই ভাল নয় বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে জেলার পর্যটনের হাল ফেরাতে নানা ভাবনাচিন্তা হচ্ছে বলে দাবি পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের বিদায়ী বোর্ডের। তা রূপায়িত হলে এলাকার অর্থনীতি চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন জেলার শিল্পপতিরা।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, পাণ্ডবেশ্বরে কুমারডিহি গ্রাম লাগোয়া ইসিএলের বাঁকোলা এরিয়ার পরিত্যক্ত জোয়ালভাঙা খোলামুখ খনির ‘ওভারবার্ডেন’ (খনির কয়লা স্তরে পৌঁছনোর জন্য কেটে ডাঁই করে রাখা মাটি-পাথর) ঘিরে তৈরি হবে পর্যটন কেন্দ্র, যার পোশাকি নাম দেওয়া হবে ‘পাণ্ডবেশ্বরে দার্জিলিং’। এই উদ্যোগের অন্তর্গত প্রকল্প হিসেবে পার্ক, রিসর্ট তৈরি করা হবে। তৈরি হবে আম, পাতিলেবু ও গোলাপের বাগান। থাকবে বাহারি গাছও। পর্যটকদের সুবিধায় তৈরি হয়েছে সিঁড়ি।
পানিফলা উষ্ণ প্রস্রবণ কেন্দ্রটিও সাজার তোড়জোড় চলছে। ইতিমধ্যে মূল রাস্তা থেকে প্রস্রবণের সংযোগকারী রাস্তাটি পাকা করা হয়েছে। এই কেন্দ্রের নাম, ‘বর্ধমানে বক্রেশ্বর’। পর্যটনে জোর দিতে এখানে পার্ক, লাগোয়া জলাশয়ে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা, পিকনিক স্পট ও রিসর্ট তৈরির ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানান কর্তারা। এ ছাড়া মাইথনে খাস জমিতে দশটি ‘কটেজ’, দুর্গাপুর স্টেশনের সামনে জেলা পরিষদের নিজস্ব জায়গায় পাঁচতলা ভবন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
জেলা পরিষদের দাবি, এ ছাড়া আরও ১২০টি প্রকল্পের কাজ হয় শুরু হয়েছে, অথবা শুরুর মুখে। বিভিন্ন এলাকা জুড়ে ২৩০ কিলোমিটার রাস্তা, জয়রামডাঙা-রতিবাটিতে ছোট নদীর উপরে সেতু, পাণ্ডবেশ্বরের বাঁকোলা ও অণ্ডালের তারকডাঙায় স্পোটর্স কমপ্লেক্স, রানিগঞ্জের এগারায় মুক্তমঞ্চ-সহ কয়েকটি কমিউনিটি হল তৈরির কথাও জানানো হয়েছে।
বিদায়ী জেলা সভাধিপতি বিশ্বনাথ বাউরি বলেন, ‘‘এই পরিকল্পনা সাবেক বর্ধমান জেলা পরিষদের সময়েই হয়েছিল। জেলা ভাগের পরে এ বছর জানুয়ারিতে আমরা ট্রেজারি অ্যাকাউন্ট খুলতে পেরেছি। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের জন্য কিছু কাজ শুরু করা যায়নি। প্রকল্পের জন্য ৮০ কোটি টাকা এসেও গিয়েছে।’’
এই পরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদী জেলার শিল্পপতিরাও। ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পাদক সুব্রত দত্ত বলেন, ‘‘প্রচারের অভাবে আমাদের জেলার পর্যটন-অর্থনীতি সে ভাবে তৈরি হয়নি। এখন পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা ভাল। তবে এই সঙ্গে আমাদের প্রস্তাব, ইসিএলের অনুমতি নিয়ে খনি-পর্যটনের ব্যবস্থাও করা হোক।’’
জেলা পরিষদও মনে করছে, এই পদক্ষেপে এলাকার অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। প্রকল্প তৈরি থেকে রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিটি স্তরেই এলাকাবাসীকে যুক্ত করা হবে বলে আশ্বাস কর্তাদের।