২ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধে আদিবাসীরা। ছবি: বিকাশ মশান
নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ নিয়ে মতান্তরের জেরে গোলমাল বেধেছিল দিন চারেক আগে। দুর্গাপুরের পলাশডিহায় ওই ঘটনায় আদিবাসীদের উপরে হামলা চালানো হয়েছে অভিযোগ তুলে ফাঁড়ি ঘেরাও করেছিল আদিবাসী গাঁওতা। অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে শনিবার ফের গাঁওতার তরফে বিক্ষোভ-অবরোধ চলল দুর্গাপুরে। দীর্ঘক্ষণ অবরোধ করে রাখা হয় ২ নম্বর জাতীয় সড়ক। এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়ায় ‘সেভ ডেমোক্রেসি’ সংগঠন। রাত পর্যন্ত গোলমাল চলে।
আদিবাসী গাঁওতার নেতা সুনীল সরেন অভিযোগ করেন, আদিবাসী যুবকেরা যাতে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের ব্যবসা করতে না পারেন সে জন্য বিনা প্ররোচনায় মঙ্গলবার রাতে তাঁদের উপরে হামলা চালানো হয়। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে ফরিদপুর ফাঁড়িতে বুধবার বিক্ষোভ দেখানো হয়। ওই ঘটনায় আহত আদিবাসী যুবক শ্যামল মুর্মু অভিযোগ করেন, স্থানীয় তৃণমূল কর্মী শ্যামসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় অনুগামীদের নিয়ে তাঁদের উপরে হামলা চালান। শ্যামসুন্দরবাবু পাল্টা অভিযোগ করেন, আদিবাসীদের একটি ক্লাব থেকে তাঁদের উপরে বিনা প্ররোচনায় হামলা করা হয়। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের সিন্ডিকেটের রাশ নিয়েই তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তি হয়। যদিও সুনীলবাবুর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আদিবাসীদের উপরে হামলা চালিয়েছে।’’
শনিবার সকাল থেকে পলাশডিহা ময়দানে জড়ো হতে শুরু করেন আদিবাসী মানুষজন। এর পরে আদিবাসী গাঁওতার নেতৃত্বে ধামসা-মাদল বাজিয়ে, তির-ধনুক, কুঠার-সহ নানা অস্ত্র হাতে মিছিল করে তাঁরা হাজির হন ফরিদপুর ফাঁড়ির সামনে। তাঁদের পাশে দাঁড়ান ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র সদস্যেরা। ফাঁড়িতে বিক্ষোভ দেখানো হয় কিছুক্ষণ। এর পরেই ফাঁড়ির সামনে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের আসানসোলের দিকে গাড়ি যাওয়ার লেনটি অবরোধ করা হয়। যান চলাচল থেমে যায়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা এমন পরিস্থিতি চলার পরে, পুলিশকর্তাদের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। তবে তার পরেও দীর্ঘক্ষণ সার্ভিস রোডে যানবাহন আটকে ছিল। শেষে অস্থায়ী ডিভাইডার সরিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়।
যানজটে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকা ডিএসপি-র কর্মী স্বর্ণেন্দু দে, কৌশিক মল্লিক, পরিতোষ সেনরা বলেন, ‘‘এ ভাবে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখা হলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগ হয়। এটা বিক্ষোভকারীদের বোঝা উচিত।’’ আদিবাসী নেতা সুনীলবাবু অবশ্য দাবি করেন, ‘‘পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’’ সন্ধ্যার পরে জাতীয় সড়কের দু’দিকের লেনে ফের অবরোধ শুরু হয়। তার জেরে আবার যানজট হয়। পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, শাসক দলের হয়ে কাজ করছে পুলিশ। মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরা হচ্ছে না। অভিযুক্তেরা তাঁদের শাসালেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সুনীলবাবুর হুঁশিয়ারি, ‘‘এর বিহিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’’ ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আদিবাসীদের তরফে বহুতলের সামগ্রী সরবরাহ নিয়ে নির্মাণকারী সংস্থাকে কোনও চাপ দেওয়া হয়নি। সিন্ডিকেটের যে দ্বন্দ্বের কথা বলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। আদিবাসী যুবকদের ব্যবসা করার অধিকার আছে। বিনা প্ররোচনায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে তাঁদের উপরে।’’
পুলিশের দাবি, ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। তাদের ধরা হবে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘আমরা আদিবাসীদের সঙ্গে আছি। যদি তাঁদের সঙ্গে কেউ খারাপ ব্যবহার করে থাকে, পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’’