Burdwan Medical College

দুর্ঘটনায় কাটা পড়েছিল হাত, ১৬ দিন পর সেই হাতের ময়নাতদন্তে হাজির মালিক নিজেই, করলেন সইও!

জরুরি বিভাগের নীচে যে ঘরে ময়নাতদন্তের আগে লেখালেখি হয়, পৌঁছে যান সেখানে। হাতের ময়না-তদন্তের কথা বলতেই অবাক সবাই।

Advertisement

সুপ্রকাশ চৌধুরী

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪ ০৯:৩৬
Share:

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।

দুর্ঘটনায় কাটা পড়েছিল হাত। সেই হাতের ময়নাতদন্ত করাতে হাসপাতালে হাজির মালিক নিজেই। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে সই করলেন। অপেক্ষা করলেন। একেবারে জরুরি নথিপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্মীদের দাবি, নানা দুর্ঘটনায় কতই তো হাত-পা কাট যায়, কিন্তু এমনটা দেখা যায় না।

Advertisement

যাঁকে নিয়ে এই ঘটনা, তিনি মেমারির হরধরপুরের বাসিন্দা তপন চৌধুরী। ৩০ জুন মেমারির দুর্গাডাঙায় বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে তাঁর ডান হাত কাটা যায়। আহত অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। ১ জুলাই তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। কনুইয়ের নীচ থেকে বাদ যায় হাত। সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে যান তিনি। হাতটি ময়নাতদন্তের জন্য রেখে দেওয়া হয় হাসপাতালে। মঙ্গলবার বছর ছিচল্লিশের তপন হাজির হন বর্ধমান মেডিক্যালে। জরুরি বিভাগের নীচে যে ঘরে ময়নাতদন্তের আগে লেখালেখি হয়, পৌঁছে যান সেখানে। হাতের ময়নাতদন্তের কথা বলতেই অবাক সবাই। ওই বিভাগের এক কর্মী জানান, রেল বা সড়ক দুর্ঘটনায় হাত, পা কেটে বাদ যাওয়ার ঘটনা অনেক ঘটে। নিয়ম মেনে কাটা হাত-পাগুলির ময়নাতদন্ত হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলির কোনও দাবিদার মেলে না। কারণ, অনেকেই মারা যান বা চিকিৎসার পরে চলে যান। তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিন পরে এমন কাউকে পেলাম, যিনি নিজেই নিজের ময়নাতদন্তে হাজির হলেন।’’

কেন গেলেন কাটা হাতের ময়নাতদন্ত করাতে? তপন জানান, ওই দিন কলকাতা যাওয়ার ট্রেন ধরতে বাসে করে মেমারি স্টেশনে যাচ্ছিলেন তিনি। দুর্গাডাঙায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। কিছু বোঝাই আগেই দেখেন, ডান হাত প্রায় কেটে ঝুলে গিয়েছে। হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে হাত বাদ দিতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘আগে টোটো চালাতাম। এখন তা বন্ধ। বাড়িতে বৃদ্ধ মা, বাবা, স্ত্রী এবং মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক ছেলে আছে। এখন জমানো টাকা আর সাহায্যেই দিন চলছে। তাই বিমার টাকাটা খুব দরকার।’’ কিন্তু এখানেই বেঁধেছে গোল। যে হাত কাটা গিয়েছে, তার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়া টাকা মিলবে না বিমার। তাই তিনি হাজির হন হাসপাতালে।

Advertisement

বর্ধমান মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের কাটা হাত, পা বা দেহের অন্য অঙ্গ কিছু দিন সংরক্ষণ করে রাখা হয়। যদি তার মধ্যে নির্দিষ্ট ভাবে আবেদন করা হয়, তখন সেগুলি ময়নাতদন্ত করে পরিবারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তপন চৌধুরীও সম্প্রতি মেডিক্যালের কাছে তাঁর কাটা যাওয়া হাতের ময়নাতদন্তের আবেদন করেন। মঙ্গলবার তা করানো হয়।

হাসপাতালে আসা তপনের কাকিমা রীতা মুখোপাধ্যায়, দাদা দীনবন্ধু চৌধুরীরা জানান, বাড়ির একমাত্র রোজগেরে এখন বেকার। তাই সংসার চালানো রীতিমতো সমস্যার হয়ে গিয়েছে। বিমার টাকা পেলে কিছুটা সুরাহা হয়। আর তপন বলেন, ‘‘একটা দুর্ঘটনা কত কিছু দেখিয়ে দিয়ে গেল! হাত গেল, সেই হাতের ময়নাতদন্তও করাতে
আসতে হল। এ বার বিমার টাকাটা পেলেই হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement