মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকারপত্রে সই সুদীপ্ত দাঁ-র —নিজস্ব চিত্র।
তিনি ছাত্র, কিন্তু শিক্ষা দিলেন। প্রথা ভাঙার, নতুন উদাহরণ তৈরি করার। সামাজিক বেড়াজাল ছিন্ন করে নিজের ২১তম জন্মদিনে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করলেন বর্ধমানের সুদীপ্ত দাঁ। সুদীপ্তর হাত ধরে দেহদানের অঙ্গীকারপত্রে সই করলেন তাঁর আরও ২০ জন আত্মীয় এবং বন্ধুও।
চিরাচরিত প্রথায় জন্মদিন উদযাপন নয়। এ এক ভিন্ন উদযাপন। সেই কাজেই এগিয়ে এলেন বর্ধমানের সদরঘাট রোডের ৩ নম্বর শাঁখারিপুকুর এলাকার বাসিন্দা সুদীপ্ত এবং তাঁর ২০ জন বন্ধু। সুদীপ্তর ‘একুশ’-এ পা রাখার দিনে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করলেন ওঁরা ২১ জন। জন্মদিনে এমন পদক্ষেপ! সুদীপ্ত আর তাঁর বন্ধুদের কাণ্ড কারখানা দেখে ভ্রূ কুঁচকেছেন অনেকে। সে সব উড়িয়ে দিয়ে সুদীপ্ত নির্বিকারে বললেন, ‘‘আগে বন্ধু, দাদাদের এমন কাজ আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মৃত্যুর পর দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করা যায়। তাই বিজ্ঞানের উন্নতিকল্পেই আমাদের সকলের এই প্রয়াস।’’
বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সুদীপ্ত বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর কথা শুনে এ কাজে এগিয়ে এসেছেন তাঁর আত্মীয় এবং বন্ধুরাও। অতঃপর যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের হাত ধরে সোমবার মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করলেন সুদীপ্ত-সহ ২১ জন। সেই দলেই ছিলেন সুদীপ্তর বন্ধু সন্দীপন সরকার। তিনি বললেন, ‘‘সমাজের কাজে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে সুদীপ্তর জন্মদিনটাই ছিল সেরা সময়।’’
একুশটি তরতাজা প্রাণের এমন পদক্ষেপ নাড়িয়ে দিয়েছে অনেককে। ভাবিয়ে তুলেছে ভিন্ন ভাবনায়। কেউ কেউ বলছেন, ‘‘আঠারো বছর, নাহ, একুশ বছর বয়সেই অহরহ, বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।’’