কালনা শহরে সবুজ সমিতির সরস্বতী পুজোর এ বারের থিম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পুতুলের প্যান্ডেল৷ ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।
লোকায়ত জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে পুতুলনাচ। এখানে পুতুলকে দক্ষতার সঙ্গে চালনা করেন শিল্পী। পুতুলনাচের মাধ্যমে লোকজীবনের নানা দিক প্রকাশিত করা হয়। নিত্যনতুন বিনোদনের দাপটে বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই পুতুলনাচ। হারিয়ে যেতে বসা এই শিল্পকে সরস্বতী পুজোর থিম করেছে কালনা শহরের চারাবাগান চড়কতলা এলাকার সবুজ সমিতি।
কালনার সব থেকে বড় উৎসব সরস্বতী পুজো। শুধু শহরে রয়েছে শ’খানেক ছোট বড় পুজো। পুজোর মাস দেড়েক আগে থেকে শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। মণ্ডপ সাজিয়ে তুলতে স্থানীয়দের পাশাপাশি, বাইরে থেকেও শিল্পীরা আসেন। তবে, দুর্যোগের কারণে ক্লাবগুলি বেশির ভাগ মণ্ডপের একাংশ ঢেকে তাঁদের ভাবনা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
চারাবাগান এলাকার ওই ক্লাবের মণ্ডপের থিম ‘সুতোয় বাঁধা পুতুল হয়ে তোমার আমার গল্প বলে’। পুতুলে সাজানো মণ্ডপে ঠাঁই পাবে কাগজের প্রতিমা। দেখা গেল, কাঠ, ফাইবার, কাগজের অজস্র পুতুল। ছোট ছোট পুতুলগুলিকে সাজানো হয়েছে নানা পোশাকে। মণ্ডপের ভিতরে দুই থেকে আড়াই ফুটের পুতুল রাখারও জায়গা তৈরি করা হয়েছে। মণ্ডপের ভিতরে বেশ কিছু পুতুলকে নড়াচড়াও করতে দেখতে পারবেন দর্শকেরা। বাইরেও থাকবে বিশেষ ভাবে সাজানো বেশ কিছু পুতুল।
গোটা এই মণ্ডপটি ফুটিয়ে তোলার কাজ করছেন অসীম মণ্ডল-সহ এক ঝাঁক শিল্পী। অসীম বলেন, “সচারচর রাজস্থানের পুতুলের কাজ দেখা যায়। তবে বাংলার পুতুলেরও একটা ঐতিহ্য রয়েছে। এক সময় পুতুলনাচ খুব জনপ্রিয় ছিল। ক্রমশ এই শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে।নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না পুতুল নাচ কেমন।” তিনি জানান, মণ্ডপে পুতুলগুলির মুখের আকার হবে মানুষের মতো। যারা জীবনের নানা গল্প বলবে। এই মণ্ডপটি দেখতে প্রচুর মানুষ আসবে বলে মনে করছেন তিনি। আর এক শিল্পী গৌতম সাহা জানান, মণ্ডপে এসে সব থেকে বেশি বিনোদন পাবে ছোটরা।
কালনার এই ক্লাবটির প্রতিমা তৈরি করছেন এলাকার শিল্পী সূর্যশেখর সিংহরায়। রাজ্যের হস্তশিল্পে পুরস্কারপ্রাপ্ত এই শিল্পী প্রতিমাটি তৈরি করেছেন কাগজ দিয়ে। সেখানে একটি উই খাওয়া বই দেখানো হয়েছে। সেখানে সমাজে নানা স্তরের মানুষ একটাই প্রশ্ন করছেন, ‘মা আমাদের ভবিষ্যৎ কী’? শিল্পী বলেন, “প্রতিমায় বার্তা দেওয়া হয়েছে, সকল স্তরের মানুষ যাতে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন।”