রানিগঞ্জের মাড়োয়ারি হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এসট্যাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট’ না মানায় স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে রোগী ভর্তি বন্ধ করার কথা জানাল রানিগঞ্জের মাড়োয়ারি হাসপাতাল। আপাতত যে রোগীরা ভর্তি রয়েছেন, তাঁরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেই হাসপাতালও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, আইন অনুযায়ী, পাঁচটি শয্যা পিছু তিন জন করে ‘জেএনএম’ (জেনারেল নার্স মিডওয়াইফ) রাখতে হবে। তা না হলে হাসপাতাল চালানো যাবে না। এই আইন অনুযায়ী, ওই হাসপাতালে ৯০টি শয্যার জন্য ৫৪ জন ‘জেএনএম’ থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ১৮ জন। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দফতর প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়। সেই মতো বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বিভাগে ২৬ জন রোগী এই মুহূর্তে ভর্তি রয়েছেন। তাঁরা সুস্থ হয়ে গেলে হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
কিন্তু এই হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে অন্য একটি বিষয় নিয়েও চর্চা হচ্ছে এলাকায়। ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সমরেন্দ্রকুমার বসু বলেন, ‘‘এই পুরনো হাসপাতালটি শিল্পাঞ্চলের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের অন্যতম ভরসা। হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে জানি না। এ ক্ষেত্রে সরকারের একটু সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি দেখা দরকার।’’ হাসপাতালের যুগ্মসচিব রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতানও জানান, এখানে ন্যূনতম খরচে স্বাস্থ্য-পরিষেবা দেওয়া হয়। এই আইন মানতে গেলে মাসে ন্যূনতম ২০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। যা কোনও ভাবেই তাঁদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ওই আইন অনুযায়ী, মঙ্গলবার রানিগঞ্জের সিহারসোল রাজবাড়ি, রামবাগান এবং পঞ্জাবি মোড়ের কাছে থাকা তিনটি বেসরকারি হাসপাতালেও নির্দেশিকা পাঠায় স্বাস্থ্য দফতর। রাজবাড়ি ও রামবাগানের বেসরকারি হাসপাতাল দু’টির কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, তাঁরা এখনও হাসপাতাল বন্ধের বিষয়ে বা আগামী দিনে কী পদক্ষেপ করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসেননি। যদিও পঞ্জাবি মোড়ের ওই হাসপাতালটির তরফে বিশ্বজিৎ মাইতি বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে ১৩৪টি শয্যার জন্য প্রায় ৯৩ জন জেএনএম দরকার। কিন্তু রয়েছেন ১২ জন। নার্সের অনুপাতিক হিসেবে শয্যা কমানোর কথা বলেছে স্বাস্থ্য দফতর। আমরা আরও কিছু নার্স নিয়োগ করে আনুপাতিক হারে শয্যা কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (পশ্চিম বর্ধমান) দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। যাঁরা তা মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’