Life Imprisonment

গৃহবধূ ও শিশুকন্যাকে হত্যা, ১৪ বছর পুরনো মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড শাশুড়ি ও স্বামীর

বুধবার খুন এবং বধূ নির্যাতন মামলার রায় ঘোষণা করল বর্ধমান জেলা আদালত। খুনের অপরাধে ওই দুই অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন বিচারক সুজয় সেনগুপ্ত।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ০৩:০৫
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

১৪ বছর আগে গৃহবধূ ও তাঁর ১১ মাসের শিশুকন্যাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে। সেই প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছিল বর্ধমান জেলার মাধবডিহি থানার পুলিশ। তার ভিত্তিতে বধূ নির্যাতন, খুন ও প্রমাণ লোপাটের ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছিল। বুধবার খুন এবং বধূ নির্যাতন মামলার রায় ঘোষণা করল বর্ধমান জেলা আদালত। খুনের অপরাধে ওই দুই অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন বিচারক সুজয় সেনগুপ্ত। এ ছাড়াও, দু’ জনকেই পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। জরিমানা দিতে না পারলে অতিরিক্ত ছ’মাসের কারাবাসের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, গৃহবধূর উপর নির্যাতনের দায়ে দু’জনকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং দু’হাজার টাকা আর্থিক জরিমানার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় দু’জনকে অতিরিক্ত তিন মাস কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। খুন এবং বধূ নির্যাতনের দু’টি সাজা একসঙ্গেই চলবে বলে জানিয়েছেন বিচারক। তিনি আরও জানান, তদন্ত চলাকালীন এবং বিচারপ্রক্রিয়ার সময়টি সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে।

Advertisement

আদালত সূত্রে খবর, সাজাপ্রাপ্তদের নাম বরুণ দে ও মহামায়া দে। মাধবডিহি থানার একলক্ষ্মী এলাকায় তাঁদের বাড়ি। মা ও ছেলে রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে কলকাতা হাই কোর্টে সাজার বিরুদ্ধে আবেদন করতে পারবেন বলে জানিয়েছে বর্ধমান জেলা আদালত। উচ্চ আদালতে আবেদন করার সামর্থ্য না থাকলে, তাঁরা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের মারফত হাই কোর্টের আইনি সহায়তা কেন্দ্রে আবেদন করতে পারবেন। জানা গিয়েছে, সাজাপ্রাপ্তরা অবশ্য এই রায়ে খুশি নন। তাঁরা ঘোষিত রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এমনকি, খুনের অভিযোগও মানতে নারাজ তাঁরা। তাঁদের দাবি, গৃহবধূ নিজেই মেয়েকে মেরে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন।

এই মামলার সরকারি আইনজীবী অজয় দে জানান, ঘটনার বছর চারেক আগে হুগলির খানাকুল থানা এলাকার বাসিন্দা ময়না পালের সঙ্গে বরুণের বিয়ে হয়েছিল। বিয়েতে পাত্রপক্ষের চাহিদা মতো পণও দেওয়া হয়েছিল। বরুণের সোনার গয়না তৈরির দোকান ছিল। বিয়ের চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে বরুণ তাঁর দোকানটি তুলে দেন। তার পর থেকে তিনি তাঁর স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই ময়নাকে শ্বশুরবাড়িতে মারধর করা হত। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তিনি বহু বার বাপেরবাড়িতে গিয়েছেন। কিন্তু, ময়না এবং তাঁর সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাপেরবাড়ি থেকে তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ১৫ অগস্ট সকালে ময়নার বাপেরবাড়িতে ফোন করে তিনি অসুস্থ বলে জানানো হয়। খবর পেয়ে বাপেরবাড়ির লোকজন ময়নার শ্বশুরবাড়িতে আসেন। সেখানে তাঁরা দেখেন বাড়ির সামনে একটি গাছের নীচে ময়না ও তাঁর ১১ মাসের মেয়ের অগ্নিদগ্ধ দেহ পড়ে রয়েছে। মৃতদেহ দু’টির পাশেই একটি কেরোসিন তেলের বোতল, লাইটার ও দেশলাই পড়েছিল। ঘটনার দিনই ময়নার দাদা বাপ্পাদিত্য পাল মাধবডিহি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে বধূ নির্যাতন, খুন ও প্রমাণ লোপাটের ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলি‌শ। এর পর, বরুণ ও তাঁর মাকে গ্রেফতার করা হয়। অবসরকালীন বেঞ্চ থেকে ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর তাঁরা জামিন পান। ঘটনায় বরুণের দাদা তরুণ দে-এরও নাম জড়িত ছিল। কিন্তু, তিনি মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাঁর নাম বাদ যায়। তদন্ত সম্পূর্ণ করে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি মাধবডিহি থানার সাব ইনস্পেক্টর শঙ্করচন্দ্র দে বধূ নির্যাতন, খুন ও প্রমাণ লোপাটের ধারায় আদালতে চার্জশিট পেশ করেন। সরকারি আইনজীবী জানান, এই মামলায় ১০ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যদের বয়ানে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement