ছেলেকে জড়িয়ে কান্না স্ত্রীর। ছবি: পাপন চৌধুরী।
মাত্র দিন পনেরো আগে খনির কাজে যোগ দিয়েছিলেন পাটমোহনার বাসিন্দা আকাশ বাউরি। এখানে বেতন কিছুটা বেশি। তাই আগের কাজ ছেড়ে সংসারের হাল ফেরাতে নতুন কাজে যোগ দেন। আচমকা এমন বিপর্যয় নেমে আসবে, স্বপ্নেও ভাবেননি পরিবারের কেউ। বুধবার খনি কার্যালয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা নিতে এসে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন আকাশের স্ত্রী পূজা বাউরি।
চিনাকুড়িতে আগের দিনের খনি দুর্ঘটনার রেশ কাটেনি বুধবারও। এ দিন সকালে আর কোনও শ্রমিক কাজে নামেননি। দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে ইসিএলের নিরাপত্তা বাহিনী। কবে ফের কাজ শুরু হবে, জানাতে পারেননি খনি কর্তৃপক্ষ। বুধবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে এসেছিলেন আকাশের বাবা শচীন বাউরি। তাঁর একটাই দাবি, পরিবারটিকে বাঁচাতে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হোক। এ দিন তিনিই জানান, ছেলে আগে বার্নপুরের ইস্কো কারখানায় ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতেন। দিন পনেরো আগে এখানে যোগ দেন। খনির কাজ অপেক্ষাকৃত ঝুঁকির জেনেও সামান্য কিছু টাকা বেশি আয়ের আশায় এই কাজে এসেছিলেন ছেলে, জানান শচীন। তিনি বলেন, ‘‘সংসারের হাল ফেরাতে গিয়ে ছেলের এমন মর্মান্তিক পরিণতি হবে, ভাবতে পারছি না।’’
বিবাহিত কর্মীর ক্ষতিপূরণের টাকা স্ত্রী ছাড়া কাউকে দেওয়া যাবে না বলে দুর্ঘটনাস্থলে ডেকে পাঠানো হয় মৃতের স্ত্রী পূজাকে। তিন মাসের ছেলেকে কোলে নিয়ে খনি কার্যালয়ের সামনে পৌঁছেই জ্ঞান হারান তিনি। পরে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু পরিবর্তে প্রতিবেশীরা বাড়ি গিয়ে মৃত্যুসংবাদ দিয়েছেন।
ক্ষতিপূরণের টাকা নিতে এ দিন খনি কার্যালয়ে এসেছিলেন আর এক মৃত শ্রমিক অনিল যাদবের ছেলে কুণাল যাদবও। আসানসোল জেলা হাসপাতালে দুপুরে দেহ দু’টির ময়না-তদন্ত হয়। কান্নায় ভেঙে পড়ে কুণাল বলেন, ‘‘বাবাকে এমন ঝুঁকির কাজে যোগ দিতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু কথা শোনেনি। সামান্য কিছু বেশি রোজগারের জন্য গিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেল।’’
বুধবার দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, তখনও খসে খসে পড়ছে আগের দিনের ধ্বংসাবশেষের খণ্ড অংশ। খনির এক শ্রমিকের দাবি, এই ডুলিটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খনির স্থায়ী শ্রমিকেরা কেউ এটির সংস্কার করতে চাননি। খনি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পরে অনিভিজ্ঞ ঠিকা শ্রমিকদের দিয়ে সংস্করের কাজ করানো হচ্ছিল। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঠিকা সংস্থার কয়েক জন অধিকারিক ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে চম্পট দেন তাঁরা। খনি অধিকারিকেরা জানান, দুর্ঘটনার কারণ জানতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।