বন্ধ কারখানা, এখানেই পুজো। ছবি: পাপন চৌধুরী।
কারখানা বন্ধ হয়েছে প্রায় ১৩ বছর আগে। তবুও প্রতি বছর ভারাক্রান্ত মন নিয়েই বিশ্বকর্মা আরাধনা করেন আসানসোল নীল কারখানার ১৪ জন নিরাপত্তারক্ষী। আশা থাকে, আবার কোনও দিন কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে। এই আশাতেই সোমবার পুরোহিতের বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে, যজ্ঞ করে পুজো সারলেন তাঁরা। এমনকি, পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার সময়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেও উঠলেন কেউ-কেউ।
চল্লিশের দশকে আসানসোল ধাদকায় কারখানাটি তৈরি করেছিল একটি সংস্থা। দীর্ঘ কয়েক দশকের চলার পথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের বহু ঘাত-প্রতিঘাত সামলে শেষমেশ ২০১০-এ হাল ছাড়েন মালিকপক্ষ। বন্ধ হয় কারখানা। কিন্তু কারখানার বিশাল ছাউনিটি এখনও আছে। অযত্নে পড়ে আছে যন্ত্র। সম্পত্তি পাহারার দায়িত্বে রয়েছেন ওই ১৪ জন রক্ষী। গত এক যুগ ধরে তাঁরা ফি বছর বিশ্বকর্মা পুজো করছেন। এ দিন সকালে কারখানার ছোট গেট পেরিয়ে আবর্জনার স্তূপ ও অপরিচ্ছন্ন রাস্তা ধরে খানিকটা এগিয়ে দেখা গেল, খসে পড়া টিনের ছাউনির নীচে প্রতিমা স্থাপন করে চলছে আরাধনা। হাত জোড় করে বসে আছেন ওই
১৪ জন রক্ষী।
পুজো শেষ হওয়ার পরে কিষাণ মৌরি নামে এক রক্ষী বলেন, “প্রতি বছর এই দিনটি এলে অতীতের কথা মনে পড়ে। মনখারাপ লাগে।” অতীতে ডুব দেন কিষাণ। জানান, কারখানা চালু থাকাকালীন তিন দিন আগে থেকে পুজোর প্রস্তুতি শুরু হত। পুজোর দিন সকাল থেকে কারখানায় হাজার শ্রমিকের ভিড় হত। আসতেন লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারাও। থাকত খাবারের ব্যবস্থাও। কিষাণ বলেন, “সুদিন গিয়েছে। কিন্তু এখনও পুজো করি আমরা। ফের এক দিন কারখানা খুলবে, স্থানীয়েরা কাজ পাবেন, এমনই আশা করি প্রতি বার।” নিমাই বাউড়ি নামে অন্য এক রক্ষীর কথায় আবার কারখানার বর্তমান অবস্থার কথা উঠে এল। বলছেন, “কারখানার ছাউনিটি যে কোনও সময় ভেঙে যেতে পারে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রাত কাটে। তাই আমরা আর নিরাপত্তার কাজ
করব না।”
২০১০-এ কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার পরে সিটু ফের উৎপাদন শুরুর দাবিতে আন্দোলন করেছিল। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পরে সিটু বিষয়টি নিয়ে আর তৎপরতা দেখায়নি বলে অভিযোগ। আইএনটিটিইউসি-র অবশ্য দাবি, রাজ্যের পালাবদলের পরে কারখানা খোলার জন্য শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে দরবার করেছিল তারা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে কারখানাটি নিয়ে আর কোনও কথাবার্তা নজরে পড়ে না বলেই পর্যবেক্ষণ প্রাক্তন শ্রমিকদের একাংশের।
যদিও, আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক বলেন, “জেলার বন্ধ কারখানা খোলার বিষয়ে আমরা ধারাবাহিক ভাবে চেষ্টা করছি। নীল কারখানাও তার মধ্যে আছে।” তবে, সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী বলছেন, “মালিকপক্ষ বেশি মুনাফার আশায় কারখানা বন্ধ করেছে। বর্তমান সরকারই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। সংগঠনের আগামী জেলা সম্মেলনে জেলার বন্ধ করাখানা খোলার বিষয়ে লাগাতার আন্দোলনের প্রস্তাব আনা হবে।”
তবে গুঁড়ো নীলের চাহিদা বাজারে পড়তি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ এখানে উৎপাদনে আগ্রহী নয় বলেই প্রথমিক মত শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতৃত্বের একাংশের। চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি কারখানা
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।