প্রত্যয়ী: বোর্ডের সামনে খুদে দাবাড়ু রেহান। নিজস্ব চিত্র
ন’বছরের রেহান রাজা জন্মান্ধ। তার স্বপ্ন কিষাণ গঙ্গোলির মতো হওয়া। সেই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছে আসানসোলের একটি ব্লাইন্ড স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া রেহান। সম্প্রতি ‘বেঙ্গল ব্লাইন্ড চেজ অ্যাসোসিয়েশনের’ উদ্যোগে কলকাতার শখেরবাজারে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অধিবেশনকক্ষে অন্ধদের জন্য দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে অনূর্ধ্ব ৯ বিভাগে রেহান ‘সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়’-এর সম্মান পেয়েছে।
আসানসোলের আজাদনগরের বাসিন্দা রেহানের বাবা জাহিদ খান ঝাড়খণ্ডে হোটেলে কাজ করেন। মা শ্যামা পরভিন বাড়িতে থাকেন। তিনি বলেন, “রেহান জন্মান্ধ। দাবার প্রতি আগ্রহ দেখে স্কুলের শিক্ষকেরাই ওর পাশে দাঁড়িয়েছেন। অভাবের সংসারে জানি না কতদূর ছেলের স্বপ্ন সফল করতে পারব।’’ স্কুলের দাবার কোচ নিমাই দাসও অন্ধ। দাবায় তিনিও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি বলেন, “এই স্কুলের ৯ জনকে গত মে মাস থেকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রথম থেকেই মনে হয়েছে, রেহানের সম্ভবনা সব থেকে বেশি। তাই ওকে বেহালায় সেপ্টেম্বর মাসে আয়োজিত দাবা প্রতিযোগিতায় নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে সে সেরার সম্মান পেয়েছে।’’
রেহানের কথায়, ‘‘অন্ধ প্রতিযোগীদের মধ্যে বর্তমানে সেরা খেলোয়াড় কর্নাটকের কিষাণ গঙ্গোলি। তাঁর মতো জাতীয় স্তরে সেরার সম্মান পেতে চাই। আমার বন্ধুরাও ভাল খেলে। ওরাও আমার পাশে আছে।’’ রেহানের সঙ্গে অনুশীলন করে মনিকা রানা, লক্ষ্মীপদ বাউরি, কিমি মুর্মু, সন্দীপ বাউরিরা। তাদের কথায়, “রেহানই এখন আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। আমরা চাই ওর সাফল্যের পথে কোনও কিছুই যাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।”
আসানসোল ব্রেল অ্যাকাডেমি পরিচালিত দৃষ্টিহীনদের জন্য স্কুলের সম্পাদক প্রদ্যুৎ মজুমদার, ‘‘আমাদের এখানে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। তার পরে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছেলে ও মেয়েদের বেহালায় পাঠানো হয়। রেহান অভাবী সংসারের ছেলে। রাজ্য সরকার বা কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওর পাশে দাঁড়ালে সে অনেক বড় খেলোয়াড় হতে পারে।’’