বার্নপুরে একটি দলীয় কর্মসূচিতে তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হার সঙ্গে নিজস্বী। নিজস্ব চিত্র।
কয়লা ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পক্ষেত্রের বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধে সরব হলেন আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হা। কেন্দ্রে এক সময় বিজেপির মন্ত্রী শত্রুঘ্নের এই অবস্থানকে কটাক্ষ করেছেন সিপিএম প্রার্থী পার্থ মুখোপাধ্যায়। যদিও শত্রুঘ্নের প্রতিক্রিয়া, “আমি দু’টি দফতরের মন্ত্রী ছিলাম ঠিকই। কিন্তু নিজের ক্ষমতায় সততার সঙ্গে কাজ করেছি। এটাই আমার মূলধন।” পাশাপাশি, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালও।
বার্নপুরের একটি প্রেক্ষাগৃহে এ দিন কর্মিসভার আয়োজন করে তৃণমূল। সেখানেই শত্রুঘ্ন বলেন, “কেন্দ্র রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ও খনি বিক্রি করে দিচ্ছে। ইসিএলের একাধিক খনি বন্ধ করে সেগুলি বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দিচ্ছে। রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেব্লস, বার্নপুরের বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বন্ধ করা হয়েছে। আমি এখানকার সাংসদ হলে, দিল্লিতে কেন্দ্রের এ সব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিবাদ জানাব।” পাশাপাশি, তেল, গ্যাসের দামবৃদ্ধির বিষয়েও সরব হন এ দিন।
কেন এমন মন্তব্য, তা নিয়েই শুরু হয়েছে চর্চা। ঘটনাচক্রে, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ৭৪টি ও ঝাড়খণ্ডে ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত খনি আছে ইসিএলেরA। কয়েকটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কয়লা ক্ষেত্রে কাজ করেন, অন্তত ৭৬ হাজার কর্মী, আধিকারিক। এর মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি আসানসোল লোকসভা এলাকার বাসিন্দা। বার্নপুর, কুলটিতে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানা, চিত্তরঞ্জনে রয়েছে রেল ইঞ্জিন কারখানা। এ ছাড়া, পূর্ব রেলের অন্যতম বড় ডিভিশন আসানসোল। ফলে, বহু পরিবার কয়লা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পক্ষেত্রের উপরে নির্ভরশীল। সে প্রসঙ্গ টেনে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, আদতে শ্রমিকের মন পাওয়ার চেষ্টাতেই এমন মন্তব্য করেছেন শত্রুঘ্ন।
সিপিএম প্রার্থী পার্থর কটাক্ষ, “উনি প্রায় চার দশক বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিজেপির টিকিটে সাংসদ হয়ে মন্ত্রীও ছিলেন। এত দিনে ওঁর মুখে বিজেপির নীতির সমালোচনা শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি, ওঁর বর্তমান দল আজ পর্যন্ত শ্রমিক স্বার্থে হওয়া কোনও আন্দোলনের সিদ্ধান্তে পাশে দাঁড়ায়নি। ফলে, শ্রমিকেরা ওঁদের বিশ্বাস
করেন না।”
পাশাপাশি, শিল্পনীতি নিয়ে দল এবং কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালও। তাঁর কথায়, “অলাভজনক সংস্থাগুলি বেসরকারিকরণের মাধ্যমে লাভজনক করে তোলাটাই যুক্তিগ্রাহ্য নীতি।” অগ্নিমিত্রার সংযোজন: “তৃণমূল প্রার্থী ঠিক মতো হোমওয়ার্ক করেননি বোধহয়। না হলে, ওঁর জানার কথা, সম্প্রতি দেশের ইস্পাত মন্ত্রক কুলটি ও বার্নপুরের ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আসানসোল রেল স্টেশনটিকে বিশ্ব মানের করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল মন্ত্রক।”
মঙ্গলবার বারাবনিতে একটি কর্মিসভায় যোগ দিতে যাচ্ছেন আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল।
এ দিকে, দলের তরফে আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা এলাকার নির্বাচনী পর্যবেক্ষক শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বার্নপুরের ওই কর্মিসভায় মন্তব্য করেন, “এই নির্বাচন আমাদের কাছে কঠিন লড়াই। এ বার আসানসোল জেতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমাদের ঝাঁপাতেই হবে।” তবে লড়াই কেন ‘কঠিন’, তা অবশ্য ভেঙে বলেননি কল্যাণ। যদিও, বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে’র কটাক্ষ: “ভোটে হারবেন, তা বুঝে গিয়েছেন ওঁরা।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “যে কোনও নির্বাচনী লড়াইয়েরই বিভিন্ন দিক থাকে। সেগুলি ঠিক ভাবে মেনে চলতে হয়। তা মানতে না পারলে, লড়াই কঠিন হয়ে যায় বলে কর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন উনি।”