এই সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরে ঢুকে মৃত্যু হয় তিন জনের। —নিজস্ব চিত্র।
নদিয়ার পর পূর্ব বর্ধমান ডেলা। সেপটিক ট্যাঙ্কের কাজ করতে গিয়ে তার মধ্যেই প্রাণ গেল তিন জনের। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন দুই শ্রমিক। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের রায়না-২ ব্লকের বড়বৈনান গ্রামে। খবর পেয়ে মাধবডিহি থানার পুলিশ দেহ তিনটি উদ্ধার করে। গুরুতর অসুস্থ এক শ্রমিক বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কী কারণে এই মৃত্যু হল, তার কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতদের নাম জয়দেব মাল (৩২), আকাশ সাঁতরা (১৮) এবং সুন্দরম মালিক (২০)। জয়দেব বাঁকুড়া জেলার কালা পাথর এলাকার বাসিন্দা। আকাশ এবং সুন্দরমের বাড়ি বড়বৈনান গ্রামেই। পাশাপাশি অসুস্থ এবং জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে জগন্নাথ মালিক এবং অরূপ মালিক নামে দু’জনকে। মাধবডিহির আলমপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জগন্নাথের চিকিৎসা চলছে। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় অরূপকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মাস খানেক আগে বড় বৈনান গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত মালিকের বাড়িতে সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরি হয়। মঙ্গলবার দুপুরে ওই ট্যাঙ্কের ঢালাইয়ের পাটা খুলতে যান শ্রমিকরা। তাঁরা সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরে নামেন। সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরে নামেন আমদাবাদ থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করা বাড়ি মালিকের ছেলে সুন্দরমও। বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁদের কেউই সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে উঠছে না দেখে আকাশ নামে এক প্রতিবেশীও সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরে নামেন। কিন্তু তাঁরও কোনও সাড়া না মেলায় ভয় পেয়ে যান ওই বাড়ির সবাই। প্রতিবেশীরা সেখানে জড়ো হয়ে ডাকাডাকি শুরু করেন। কিন্তু সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে কারও সাড়া মেলেনি।
দিলীপ মালিক নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বাঁশ ও মোটা দড়ির সাহায্যে আমরা কয়েক জন মিলে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে একে একে পাঁচ জনকে বাইরে বের করে আনি। সবাইকে মাধবডিহি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তিন জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অরূপ নামে একজনের শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে।’’ এই ঘটনা প্রসঙ্গে এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, “সম্ভবত বিষাক্ত গ্যাসের কারণেই সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরে দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’’ মাধবডিহি থানার পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল নদিয়ার ভীমপুরে এমনই একটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেও নবনির্মিত সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরের ঢালাইয়ের পাটা খুলতে নেমে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। গত ৩০ অগস্ট একই রকম ঘটনায় নদিয়ায় আরও এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। জখম হন এক শ্রমিক ।