—প্রতীকী চিত্র।
ফোনের ওটিপি হাতিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট করে দেওয়ার চক্র চালানোর অভিযোগে সোমবার গভীর রাতে দুর্গাপুরের ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার ইছাপুর থেকে তিন যুবককে গ্রেফতার করল ঝাড়গ্রামের পুলিশ। ফরিদপুর থানার সঙ্গে যৌথ অভিযানে গ্রেফতার করা হয় তাদের। রাতেই ধৃতদের নিয়ে পুলিশ ঝাড়গ্রাম রওনা দেয়। ধৃতদের কাছে ১২টি মোবাইল, দু’টি ট্যাব, ১২৩টি সিম কার্ড, ১৪টি এটিএম কার্ড-সহ বিভিন্ন নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত তিন জনের মধ্যে রয়েছে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ার বাসিন্দা সরোজ দাস, তার শ্যালক দুর্গাপুরের অমরাবতীর বাসিন্দা আকাশ দাস এবং আর এক আত্মীয়, সরপি মোড়ের বাসিন্দা বিকাশ দাস। তারা ইছাপুরে একটি আবাসনে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। তাদের বিরুদ্ধে মোবাইলের ওটিপি জেনে নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার অনেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং এটিএম থেকে টাকা হাপিস করার অভিযোগ রয়েছে। শুধু টাকা তুলে নেওয়া নয়, অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করে সেই টাকায় তারা অনলাইনে বিভিন্ন সামগ্রী কিনত বলেও অভিযোগ।
রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি বাবদ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে ৫ হাজার টাকা, তবে সে জন্য জানাতে হবে মোবাইলে পাঠানো পর পর কয়েকটি ওটিপি— সম্প্রতি এমন প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইলের এক ব্যবসায়ী তিন দফায় মোট ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা খুইয়েছেন বলে অভিযোগ। তার তদন্তে নেমে মোবাইলের ‘টাওয়ার লোকেশন’ অনুসরণ করে সোমবার রাতে ইছাপুরে পৌঁছয় ঝাড়গ্রাম সাইবার অপরাধ থানার পুলিশ। ফরিদপুর থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালানো হয় ইছাপুরের ওই ভাড়া বাড়িতে।
পুলিশ জানায়, সরোজের ঘর থেকে মোবাইল, ট্যাব, সিম কার্ড, এটিএম কার্ড-সহ বিভিন্ন নথি উদ্ধার হয়। পুলিশের সন্দেহ, সে ‘জামতাড়া গ্যাং’-এর সদস্য। দুই আত্মীয়কে নিয়ে ইছাপুরে বসে সাইবার অপরাধের চক্র চালাচ্ছিল। তার হাত ধরেই আকাশ ও বিকাশের সাইবার অপরাধে হাতেখড়ি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে।
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, জামতাড়ায় বসে এ ধরনের কারবার করলে এখন পুলিশের নজরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সেখান থেকে অনেক দূরে, দুর্গাপুর শহরের বাইরে এক প্রত্যন্ত এলাকায় ডেরা বেঁধেছিল সরোজ। দুই আত্মীয়কে সেই কাজ শিখিয়ে নিয়েছিল। সরোজকে জেরা করে এই চক্রে আর কারা রয়েছে, কোথায় তাদের অপরাধের জাল ছড়িয়ে রয়েছে, এ ধরনের নানা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা হবে বলে জানিয়েছে ঝাড়গ্রাম পুলিশ। ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার পরে ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) সব্যসাচী ঘোষের নেতৃত্বে তদন্ত করে তিন অভিযুক্তকে ধরা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ ধৃতদের মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম সিজেএম আদালতে তোলা হলে ৬ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।