প্রতীকী ছবি।
উন্নয়নের কাজে ‘দুর্বল’ হওয়ায় ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘লাল সতর্কতা’ জারি করল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। তালিকায় রয়েছে কাটোয়ার সুদপুর, পূর্বস্থলীর নিমদহ, ভাতারের বড়বেলুন ১, কেতুগ্রামের সিতাহাটির মতো পঞ্চায়েতের নাম। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, “পঞ্চায়েতে টাকা পড়ে থাকবে। লক্ষ্যমাত্রা নেওয়ার পরেও কাজ করবে না, এ সব হবে না। সে জন্যই উন্নয়নমূলক কাজের চারটে বিভাগের মধ্যে কোনও না কোনও বিভাগে শেষ দিকে রয়েছে, এমন পঞ্চায়েতগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর মনোভাব থাকবে।’’
পঞ্চায়েত স্তরে নিজস্ব তহবিল ও বিশ্বব্যাঙ্কের অনুদানের ব্যবহার, ১০০ দিনের কাজের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাজ, বাংলা আবাস যোজনা ও ‘মিশন নির্মল বাংলা’র লক্ষ্যপূরণ—এই চারটে মানদণ্ডেই পঞ্চায়েতগুলির কর্মক্ষমতা বিচার করছে জেলা প্রশাসন। তাতেই ২১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৫টি পঞ্চায়েতের পাশে ‘লাল কালি’র দাগ পড়েছে। প্রশাসনের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, নিজস্ব তহবিল ও বিশ্বব্যাঙ্কের অনুদানের ২৫ শতাংশও খরচ করতে পারেনি, এমন পঞ্চায়েতগুলিকে ‘দুর্বল’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। একশো দিনের প্রকল্পে ৪০ শতাংশের নীচে, বাংলা আবাস যোজনা (বিএওয়াই) ও মিশন নির্মল বাংলার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ৮৫ শতাংশের নীচে কাজ করলেও ‘দুর্বল’ বলে ধরা হয়েছে।
১ অগস্ট প্রকাশিত ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫টির মধ্যে সাতটি পঞ্চায়েত নিজস্ব তহবিলের টাকা খরচ করতে ব্যর্থ। ওই তালিকায় রয়েছে, ভাতারের বড়বেলুন ১, বর্ধমান ১ ব্লকের বাঘার ২, গলসি ১ ব্লকের চাকতেঁতুল, জামালপুরের জারগ্রাম, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নসরৎপুর, কাটোয়া ১ ব্লকের সুদপুর, কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সিতাহাটি। সবচেয়ে বেশি টাকা পড়ে রয়েছে নসরৎপুর (চার কোটি), জারগ্রামে (২ কোটি ৩০ লক্ষ)। এক কোটির টাকার উপরে তহবিলে রয়েছে বাঘার ২ ও চাকতেঁতুলেও। ১০০ দিনের কাজে লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশেও পৌঁছতে পারেনি সুদপুর, সিতাহাটি, জারগ্রাম। এ ছাড়া, রয়েছে গলসির খানো, জামালপুরের আঝাপুর, কালনা ২ ব্লকের কল্যাণপুর, পূর্বস্থলীর মুকসিমপাড়া, নিমদহ, মেমারির নিমো ২, কেতুগ্রাম ২-এর গঙ্গাটিকুরি, নবগ্রাম।
ওই রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে ১৫টি পঞ্চায়েতই ‘দুর্বল শ্রেণি’ বলে তালিকাভুক্ত হয়েছে। মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে, ওই ১৫টির মধ্যে ‘সবুজ’ তালিকায় নাম রয়েছে, বাঘার ২, খানো আর সুদপুর। বাকিরা সেই লালে। এর মধ্যে আবার প্রতিটি পঞ্চায়েত পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েও গিয়েছে। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম বলেন, “সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব টাকা খরচ করার জন্য ওই পঞ্চায়েতগুলিকে বলা হয়েছে। জেলা পরিষদ থেকেও নজর রাখা হচ্ছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এপ্রিলে পঞ্চায়েতগুলিতে মোট ২২০ কোটি টাকা পড়েছিল। গত ২৮ জুলাই পর্যন্ত ৫৪.৪৬ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। এখনও পড়ে রয়েছে প্রায় ১০৭ কোটি টাকা। জেলাশাসক বলেন, “যে সব পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি ভাল কাজ করে উপরের দিকে রয়েছে, তাঁদের উৎসাহিত করা হবে। কারা-কারা ওই তালিকায় থাকবে, তার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।’’