প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বর্ধমান ২ ব্লকের নবস্থা পঞ্চায়েত এলাকার রুমা সাঁতরা চেনেন না রায়না ২ ব্লকের বড়বৈনানের চন্দন সামন্তকে। যোগাযোগ নেই খণ্ডঘোষের লোদনা পঞ্চায়েতের আশিস ঘোষ, জামালপুরের বেরুগ্রামে হাসিনা বেগমদেরও। কিন্তু সবারই সমস্যা এক। প্রায় দু’বছর আগে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেও প্রাপ্য মজুরি পাননি তাঁরা। শনিবার কলকাতার ধর্নামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বকেয়া মেটানোর ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার নবান্ন থেকে জেলায় জেলায় চিঠি পাঠিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, পূর্ব বর্ধমানে ওই প্রকল্পে ২০২১-২২ সালে ৩ লক্ষ ৩ হাজার ও ২২-২৩ সালে ১ লক্ষ ৯০ হাজার জনের মজুরি বাকি আছে। আনুমানিক ভাবে শুধুমাত্র মজুরি বাবদ জেলার পাওনা ৮৮ কোটি টাকা। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ নেই। রাজ্য সরকার ১০০ দিনের প্রকল্পের জবকার্ড থাকা শ্রমিকদের কাজ দিয়েছিল। সে জন্য খসড়া তালিকা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কত জন মজুরি পাবেন, তা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব হবে না।”
মঙ্গলবার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, জেলাশাসক আজ, বুধবার বিডিও ও পঞ্চায়েতের আধিকারিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন। বৃহস্পতিবার প্রাপকদের তালিকা ও তাঁদের বকেয়া টাকার খসড়া তালিকা তৈরি হবে। শুক্রবার ওই তালিকা নিয়ে প্রাপকদের বাড়ি গিয়ে খতিয়ে দেখবেন আধিকারিক, কর্মীরা। শুক্রবার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে ব্লক প্রশাসন। সোমবার থেকে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলেও প্রশাসনের আশ্বাস।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, সরকারি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় খুশি পুকুর কাটা, রাস্তার কাজ করা ওই সব শ্রমিকেরা। তাঁরা জানান, ২০২১ সালে নভেম্বর মাসে শেষ বার ১০০ দিন প্রকল্পের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল। আর টাকা মেলেনি। তার পরের দু’টি অর্থবর্ষে ওই প্রকল্পে ‘লেবার বাজেট’ শূন্য। ফলে দু’ভাবে বিপাকে পড়েছেন গরিব জবকার্ডধারীরা। প্রথমত, কর্মসংস্থানের অভাব। দ্বিতীয়ত, প্রাপ্য মজুরি না-পাওয়া।
ওই প্রকল্পের কর্মীদের দাবি, “এলাকায় পুকুর কাটা, নিকাশি নালা, গাছ লাগানোর কাজ হয়ছে। কেউ ২১ দিন, কেউ ৩২ দিন কাজ পেয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষনায় আশায় বুক বেঁধেছেন তাঁরা।’’ ওই টাকা দিয়ে কেউ ধার শোধ করবেন, কেউ বাড়ি তৈরি বা ছেলেমেয়ের পড়ার কাজে ব্যবহার করবেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মানবিক। সে জন্য কেন্দ্রের বকেয়া টাকাও নিজের কাঁধে নিয়ে ১০০ দিন প্রকল্পের কর্মীদের মুখে হাসি ফোটাতে চাইছেন।” বিজেপির মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা তো বারবার বলেছি হিসেব দাও, টাকা নাও। ভোটের আগে টাকা বিলোতে চাইছে রাজ্য সরকার।”