এ বার বাঁ হাতে লিখতে শুরু করলেন রেণু খাতুন। নিজস্ব চিত্র।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টা: রেণু খাতুনের ডান হাত কেটে নিল তাঁর স্বামী শের মহম্মদ এবং তার দুই বন্ধু।
রবিবার সকাল ৯টা: রেণুর ডান হাতে অস্ত্রোপচার করলেন দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
সোমবার সকাল ৯টা: জ্ঞান ফিরল রেণুর।
মঙ্গলবার দুপুর ২টো: দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে দেখা গেল বাঁ হাতে লিখছেন রেণু খাতুন।
ডান হাত বাদ গিয়েছে রেণুর। কিন্তু মনের জোরকে সম্বল করেই জীবনে এগিয়ে যেতে চান তিনি। ডান হাতে কোনও দিনই লিখতে পারবেন না। তা জেনে গিয়েছেন তিনি। তাই এ বার তিনি বাঁ হাতেই ‘হাতেখড়ি’ নিয়েছেন। ডান হাত বাদ যাওয়ার চার দিনের মাথায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বাঁ হাতে নিজের নাম এবং ঠিকানা লিখে ফেলেছেন রেণু। হাতের লেখা হয়তো আগের মতো হচ্ছে না। কিন্তু সেই বাধাও যে তিনি মনের জোরেই কাটিয়ে ফেলবেন, এ বিশ্বাস তাঁর দৃঢ়।
রেণু বলছেন, ‘‘আমার স্বামী ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেছিল। ওর দায়িত্ব ছিল জীবনে আমাকে এগিয়ে যাওয়ায় সাহায্য করা। কিন্তু ও আমাকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল। তবে আমি থামার মেয়ে নই। আরও এগিয়ে যেতে চাই।’’ রেণু আরও বলছেন, ‘‘আমার সঙ্গে সরাসরি সরকারের কোনও প্রতিনিধির যোগাযোগ হয়নি। তবে সংবাদমাধ্যমে জেনেছি, চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। আমি চাই, আমার স্বামী এবং ওর দুই বন্ধুকে ধরে তাড়াতাড়ি শাস্তি দেওয়া হোক। বিষয়টিতে যদি মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন, তা হলে ভাল হয়। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।’’
রেণুর হার না মানার মেজাজ দেখে তাঁর এক সহকর্মীও বলে ফেললেন, ‘‘ও শক্ত মনের মেয়ে। ও জিতবেই। ওকে এই লড়াই জিততেই হবে।’’
জিততেই হবে! জিততেই হবে রেণুকে। রেণু এখন নিজেকেও এই কথা বলে চলেছেন অনর্গল। জিততেই হবে! দাঁতে দাঁত চেপে যন্ত্রণা সহ্য করা জেদে বলে চলেছেন নির্যাতিতা থেকে নায়িকা হয়ে ওঠা রেণু। মনে পড়ে যাচ্ছে কি আর এক বাঙালি নায়কের কথা? মুজিবুর রহমানের সেই অমর উক্তি...দাবায়ে রাখতে পারবা না!