খাগড়াগড় কাণ্ডে হতাশ লড়াকু ও-বাংলার মানুষ

জঙ্গি ও মৌলবাদীদের সমাজ থেকে মুছে ফেলতে আপ্রাণ লড়াই চালাচ্ছেন ও পার বাংলার রাজশাহি-সাতক্ষীরার সাধারণ অসাম্প্রদায়িক মানুষ। এ পার বাংলা থেকে সে কাজে এত কাল উৎসাহ ও সহযোগিতাই পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু বর্ধমান বিস্ফোরণের পরে পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের সঙ্গে জামাত-জঙ্গিদের যোগসাজসের যে সব অভিযোগ সামনে আসছে, তাতে তাঁরা যত না বিস্মিত, তার চেয়ে বেশি যেন বিমর্ষ, হতাশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৮
Share:

জঙ্গি ও মৌলবাদীদের সমাজ থেকে মুছে ফেলতে আপ্রাণ লড়াই চালাচ্ছেন ও পার বাংলার রাজশাহি-সাতক্ষীরার সাধারণ অসাম্প্রদায়িক মানুষ। এ পার বাংলা থেকে সে কাজে এত কাল উৎসাহ ও সহযোগিতাই পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু বর্ধমান বিস্ফোরণের পরে পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের সঙ্গে জামাত-জঙ্গিদের যোগসাজসের যে সব অভিযোগ সামনে আসছে, তাতে তাঁরা যত না বিস্মিত, তার চেয়ে বেশি যেন বিমর্ষ, হতাশ।

Advertisement

গত বছর ঢাকার আন্তর্জাতিক আদালত মানবতা-বিরোধী অপরাধে জামাত নেতাদের শাস্তি দেওয়ার পরে বাংলাদেশ জুড়ে লাগামহীন সন্ত্রাস চালায় মৌলবাদী শক্তি। সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারত সীমান্ত সংলগ্ন সাতক্ষীরা ও রাজশাহি। কিন্তু তার পরেই কোমর বেঁধে রুখে দাঁড়িয়েছেন সাতক্ষীরার মানুষ। রাত জেগে পাড়ায় পাড়ায় পাহারা দিয়েছেন তাঁরা। পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন দুষ্কৃতীদের। তৈরি হয়েছে নতুন একটি সাধারণ মঞ্চ ‘রাজাকারমুক্ত সাতক্ষীরা’। সন্ত্রাসের শিকার ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবারগুলির পাশে দাাঁড়ায় তারা। আওয়ামি লিগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মতো রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ জড়ো হয়েছেন এই মঞ্চে। বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া উপাসনালয়, কমিউনিটি সেন্টার তাঁরা নতুন করে গড়ে তোলার শপথ নিয়ে কাজ শুরু করছেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার ও প্রশাসনও।

একাত্তরে সাতক্ষীরা অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে থাকা আবেদ খান ‘রাজাকারমুক্ত সাতক্ষীরা’র অন্যতম সংগঠক। বুধবার কলকাতায় তিনি বলেন, “খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ ও তার পরে যে সব তথ্য প্রকাশ্যে আসছে, তাতে আমাদের মন ভেঙে যাচ্ছে। এত কাল জঙ্গি-বিরোধী লড়াইয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেবল অনুপ্রেরণাই পেয়েছি। আজ এ কোন ছবি দেখছি আমরা এ রাজ্যের?” তিনি বলেন, “সাতক্ষীরা থেকে জঙ্গিদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিন্তু সীমান্ত পেরিয়ে তারা আশ্রয় নিচ্ছে। সেখান থেকে বিস্ফোরক এনে আবার নাশকতার চক্রান্ত করছে।”

Advertisement

বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় লেখক ও সম্পাদক আবেদ খানের মতে, খালেদা জিয়া মৌলবাদী জামাতে ইসলামিকে হাত ধরে শাসন ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার পরই বাংলাদেশের সর্বত্র শুরু হয় জঙ্গিদের আস্ফালন। আবেদ খানের মতে, মৌলবাদীদের শক্তি আজ এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাটার স্থায়িত্ব নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। তালিবান বাংলাদেশ কায়েম করতে চায় জঙ্গিরা। বাংলাদেশের মানুষ তার প্রতিরোধে নেমেছেন। বাংলাদেশের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও বলেন, “জঙ্গিদের নিয়ে রাজনীতি কখনওই কাম্য নয়। পৃথিবীর কোথাওই নয়। এটা যে সভ্যতার পক্ষে বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতী, তা সকলেরই বোঝা উচিত।”

সাতক্ষীরার সাংসদ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মুস্তাফা লুৎফুল্লার কথায়, মানুষ জোট বেঁধে প্রতিরোধ করাতেই জঙ্গিরা পিছু হটছে। সে জন্যই তারা সীমান্তের ও পারে নতুন বন্ধু খুঁজে নিয়ে তাদের আতিথ্য নিয়েছে। সাংসদের কথায় মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে চিরকাল সাহায্যই পেয়ে এসেছেন তাঁরা। কিন্তু সেখানেও জঙ্গিরা গিয়ে ডেরা বাঁধার সুযোগ পাওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ হতবাক। “এই অতিথি যে বিপজ্জনক, পশ্চিমবঙ্গের সচেতন মানুষ তা নিশ্চয়ই বুঝবেন,” বলছেন মুস্তাফা লুৎফুল্লা।

প্রতিরোধের মুখে রাজশাহিতেও সুবিধা করতে পারছে না মৌলবাদীরা। এখানেও সন্ত্রাসের শিকার পরিবারগুলির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে নাশকতায় ধ্বংস হওয়া নির্মাণগুলি। ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল সমিতি’র রাজশাহি শাখার সম্পাদক কামরুজ্জামান বলেন, জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিস্ফোরক-অর্থ পাচ্ছে, বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়। কিন্তু খাগড়াগড়ের পরে বিশ্বাস না-করে উপায় থাকে না। রাজশাহির আওয়ামি লিগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দাবি করেন, “জঙ্গিদের আশ্রয়দাতারাও যেন শাস্তি পায়।”

বুধবারও বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে বলা হচ্ছে, সরকারি ভাবে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে কোনও তথ্য দিল্লি দেয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ জুড়েই ফের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন। কিছু ধরপাকড়ও হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ঢাকা যখন জঙ্গিদের মোকাবিলায় এমন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি মেনে চলছে, এমন গুরুতর বিষয়ে সীমান্তের এ পারের প্রশাসন তখন কেন এত উদাসীন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement