সৌভিককে অনেক টাকা দিতেন বন্ধুপ্রকাশ

কী কারণে ছোট মেয়ের পরিবারকে খুন করা হল, এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না বিউটির বাপের বাড়ির সদস্যেরা।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

সিউড়া শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৩২
Share:

সিউড়ার এই বাড়িতে ভাড়া ছিলেন সৌভিক বণিক। নিজস্ব চিত্র

দশমীর দিন সকালেই মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ছোট মেয়ে। রামপুরহাট থানার সিউড়া গ্রামের বাড়িতে বসে তখনও চন্দনা মণ্ডল ভাবতে পারেননি, জিয়াগঞ্জের সাহাপুরের বাড়িতে জামাই, মেয়ে ও নাতির কী ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে চলেছে! বিজয়া দশমীতে মাকে ফোন করার কিছু পরেই নিজেদের বাড়িতে খুন হয়ে যান চন্দনাদেবীর ছোট মেয়ে বিউটি পাল। তাঁর মতোই কুপিয়ে মারা হয় বিউটির স্বামী বন্ধুপ্রকাশ এবং ছ’বছরের ছেলেকে।

Advertisement

কী কারণে ছোট মেয়ের পরিবারকে খুন করা হল, এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না বিউটির বাপের বাড়ির সদস্যেরা। তবে তাঁদের বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে, রামপুরহাটের বাসিন্দা সৌভিক বণিকের প্রসঙ্গ। বন্ধুপ্রকাশের ‘ঘনিষ্ঠ’ বন্ধু সৌভিক ওরফের দীপকে ধরতে পারলেই পুলিশ রহস্যের কিনারা করতে পারবে বলে মনে করেন বিউটি-র দাদা সাক্ষীগোপাল মণ্ডল।

রামপুরহাটের সৌভিকের সঙ্গে নিহত বন্ধপ্রকাশের ঠিক কেমন সম্পর্ক ছিল?

Advertisement

সাক্ষীগোপাল জানালেন, ৯ বছর আগে বন্ধুপ্রকাশের সঙ্গে তাঁর বোন বিউটির বিয়ে হয়েছিল। পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক হলেও বন্ধুপ্রকাশ মার্কেটিং ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। সেই ব্যবসার সূত্রেই রামপুরহাটের ভাঁড়শালাপাড়ার গ্যাসগলির বাসিন্দা সৌভিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে বন্ধুপ্রকাশের। সেই সূত্রে বন্ধুপ্রকাশের সাহাপুর ও জিয়াগঞ্জের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত ছিল সৌভিকের। সুভাষের দাবি, ‘‘সৌভিকের সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়ে বন্ধুপ্রকাশের অনেক টাকা ধারদেনা হয়। অথচ ব্যবসার যাবতীয় লাভ সৌভিক ভোগ করত। সেই সঙ্গে নানা ভাবে বন্ধুপ্রকাশের কাছ আর্থিক সুবিধা নিত সৌভিক।’’

শনিবার নিজের বাড়িতে মেয়ের ছবি হাতে কাঁদতে কাঁদতে চন্দনাদেবী বললেন, ‘‘জামাই ওর বন্ধুকে এতটাই বিশ্বাস করত যে, বিউটিকেও টাকাপয়সার হিসেব দিত না। ১৯ বছরের চাকরি জীবনে নিজের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স বলতে জামাইয়ের তেমন কিছু ছিল না। অথচ সৌভিককে বারবার টাকা ধার দিত।’’ তাঁদের অভিযোগ, চড়া সুদে ধার করে লক্ষাধিক টাকা সৌভিককে দিয়েছিলেন বন্ধুপ্রকাশ। তবে টাকা ফেরত দিতে চাইত না সৌভিক। সাক্ষীগোপালের আরও দাবি, ‘‘বন্ধুপ্রকাশের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায়, গত এক বছর ধরে ওর গৃহঋণের সুদের টাকা আমাদের শোধ করতে হয়েছে। এক সময় সৌভিকের বাড়িতে গিয়ে বন্ধুপ্রকাশের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে মানাও করা হয়। সেই সঙ্গে বন্ধুপ্রকাশের সঙ্গে ও যাতে আর যোগাযোগ না রাখে, সেটাও বলা হয়।’’ এর পরেও দু’জনের যোগাযোগ ছিল বলে সাক্ষীগোপাল জানিয়েছেন।

বন্ধুপ্রকাশ-বিউটির ছ’বছরের ছেলেও খুন হয়ে যাওয়ায় পরিবার আরও বেশি শোকসন্তপ্ত। সাক্ষীগোপালের কথায়, ‘‘এ বছর বিশ্বকর্মা পুজোয় জামাই, বোন, ভাগ্নে আমাদের বাড়ি এসেছিল। পাঁচ দিন ছিল। ভাগ্নেটা কত মজা করেছিল। কী এমন ঘটল যে, তিন জনকেই খুন করা হল!’’ পরিবারের আর্জি, এত বড় ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের কেউ যেন ছাড় না পায়। চরম শাস্তি হোক দোষীদের।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌভিকের বাবা, বিদ্যুৎ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীও জিয়াগঞ্জ থানায় গিয়েছেন শনিবার। সৌভিকের ভাই সৌরভ এ দিন বলেন, ‘‘দাদাকেও পুলিশ ওই থানাতেই রেখেছে বলে খবর পেয়েছি। সত্যি-মিথ্যা জানি না। তবে, দাদার বিরুদ্ধে যে-সব অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। ছ’মাস ধরে ওর সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই।’’

রামপুরহাট থানারই নাইশর গ্রামে থাকেন বন্ধুপ্রকাশের বাবা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী অমর পাল। বর্তমানে তিনি রামপুরহাট শহরের রামরামপুরে থাকেন। এ দিন সকালে তিনি জানান, বন্ধুপ্রকাশ তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী-র সন্তান। ৩০ বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে স্ত্রী-ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। অমরবাবুর দাবি, ‘‘খুনের ঘটনা টিভি-তে দেখে জেনেছি। তবে, এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’’ এ দিনই সন্ধ্যায় মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের একটি দল অমরবাবুর বাড়িতে আসে তদন্তের জন্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement