Baisakhi Banerjee

ফোনালাপে গলল বরফ, দিলীপকে মধ্যাহ্নভোজেও ডাকলেন বৈশাখী

রবিবার সল্টলেকে পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (ইজেডসিসি) বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল রাজ্য বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২০ ০০:৫৭
Share:

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

দেড় দিন ধরে একটানা বিতর্ক। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের 'আশীর্বাদ' তাঁদের উপরে থাকা সত্ত্বেও রাজ্য বিজেপির একাংশ শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'অস্বস্তি বাড়াতে তৎপর', এই অভিযোগ উঠছিল বিজেপির অন্দরেই। বিজেপি আয়োজিত বিজয়া সম্মিলনীতে শোভনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বৈশাখীকে ব্রাত্য রাখা হয়। তাকে ঘিরেই শুরু হয় টানাপড়েন। কিন্তু রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ-এর সঙ্গে বৈশাখীর ফোনালাপ লহমায় মিটিয়ে দিল সেই বিতর্ক। কথোপকথন এতটাই 'উষ্ণ আবহ' তৈরি করল যে, দিলীপকে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণও জানালেন বৈশাখী।

Advertisement

রবিবার সল্টলেকে পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (ইজেডসিসি) বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল রাজ্য বিজেপি। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য শোভন চট্টোপাধ্যায়কে শনিবার আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিজেপি দফতর থেকে বৈশাখীর কাছেই ফোন গিয়েছিল। ফোনে তাঁকে বলা হয়, রবিবারের অনুষ্ঠানে শোভনকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন রাজ্য সভাপতি। বৈশাখীকেও উপস্থিত থাকতে হবে, এমন কোনও কথা সে ফোনে বলা হয়নি বলে বৈশাখীর দাবি।

আরও পড়ুন: ‘দলের পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে’, সিব্বলের পর এ বার সরব গুলাম নবি আজাদ

Advertisement

গোলমালের সূত্রপাত সেখানেই। শোভন ও বৈশাখী, দু'জনেই বিস্ময় প্রকাশ করেন এই ঘটনায়। তাঁরা দু'জনেই দলের রাজ্য কমিটির সদস্য। তা সত্ত্বেও বিজয়া সম্মিলনীতে একজনকে ডাকা হল, অন্য জন বাদ গেলেন কেন, বিস্ময় তা নিয়েই। শুক্রবার প্রায় রাতভর বিজেপির দুই নেতা শোভনের গোলপার্কের বাড়ি গিয়ে বৈঠক করেছিলেন। কেন্দ্রীয় সম্পাদক অরবিন্দ মেনন এবং রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর সঙ্গে শোভন-বৈশাখীর সেই বৈঠক 'অত্যন্ত ফলপ্রসূ' হয়েছিল বলে বিজেপির একাংশই দাবি করেছিল। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছন্দপতন ঘটানো কলটা পৌঁছয় বৈশাখীর ফোনে। শুক্রবার রাতের বৈঠকে তৈরি হওয়া 'ফিল গুড' ছবি ম্লান হয়ে যায়। শোভন এবং বৈশাখী, দু'জনেই অভিযোগ করেন যে, রাজ্য বিজেপির একটা অংশ 'বিভাজন' নীতি নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সেই চেষ্টাকে প্রশ্রয় দিতে চান না বলে তিনি বিজয়া সম্মিলনীতে যাবেন না বলে শোভন জানিয়ে দেন।

বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অবশ্য শনিবারও কোনও অভিযোগ ছিল না শোভন-বৈশাখীর। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে অনেক বারই দলের একটি অংশের সঙ্গে শোভনদের টানাপড়েন হয়েছে। শোভনরা তা নিয়ে মুখও খুলেছেন। কিন্তু কখনওই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি তাঁরা বিরূপতা প্রকাশ করেননি। শনিবারের ঘটনার পরেও সে অবস্থান একই ছিল। এমনকি বৈশাখী এও বলেন যে, রাজ্য নেতৃত্বও তাঁদের সম্মান দিতে চান, না চাইলে অমিতাভ চক্রবর্তীর মতো নেতা তাঁদের বাড়ি গিয়ে বৈঠক করতেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও দলের একটি অংশ তাঁদের 'অপদস্থ' করতে এবং তাঁদের দু'জনের মধ্যে বিভাজন ঘটাতে সক্রিয় বলে শোভনরা রবিবার দুপুর পর্যন্তও অভিযোগ করতে থাকেন। রাতে সেই টানাপড়েন অনেকটাই লঘু হয়ে গেল। সৌজন্যে দিলীপ-বৈশাখীর ফোনালাপ।

দিলীপ শনিবার রাত থেকেই বার বার জানাচ্ছিলেন যে, বৈশাখীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, এমন নয়। তিনি বলছিলেন, "ফোন সবাইকে করা হয়েছে। কারও কারও হয়তো ফোন বন্ধ ছিল।" কিন্তু বিজয়া সম্মিলনী আয়োজন করেছিল বিজেপি-র যে সাংস্কৃতিক সেল, সেই সেলের তরফে অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত স্বীকার করে নেন যে, বৈশাখীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, "দল যাঁকে ডাকা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছে, তাঁকে ডেকেছে।"

ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে শনিবার রাত থেকে সক্রিয় হয়েছিলেন মেনন। দলের একটি অংশ যে বৈশাখীকে বাদ দিয়ে শোভনের অস্বস্তি বাড়াতে সচেষ্ট হয়েছিল, তা মেনন বুঝতে পারেন বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। কিন্তু দিলীপের অঙ্গুলিহেলনেই এ সব হচ্ছে বলে যে ধারণা তৈরি করার চেষ্টা হয়েছিল, তা ভুল প্রমাণ করতে মেনন সক্রিয় হন। দিলীপ এবং বৈশাখীর সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন মেনন। দিলীপ একাধিক বার ফোন করার চেষ্টা করেও বৈশাখীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি বলে বৈশাখীকে জানান মেনন। এর পর রবিবার রাতে বৈশাখী ফোন করেন দিলীপকে। ভুল বোঝাবুঝি 'কেটে যায়' সেখানেই।

দিলীপের সঙ্গে কথা হওয়ার পরে বৈশাখী আনন্দবাজার ডিজিটালকে রবিবার রাতে বলেছেন, "দিলীপদা অনেক বার ফোন করেও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি বলে শুনলাম। তাই আমি নিজেই ফোন করেছিলাম। দিলীপদা তখন নিজেও বললেন যে, তিনি কিছুতেই যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।" বৈশাখীর কথায়, "একটা বিভাজনের চেষ্টা দলেরই কেউ কেউ করছিলেন। তার দায়টা কৌশলে দিলীপদার উপরে চাপানোর চেষ্টাও হচ্ছিল। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার সরাসরি কথা হওয়ায় সে চেষ্টা সফল হল না। আগামী দিনে দিলীপদার নেতৃত্বেই আমরা দলের হয়ে কাজ করব।"

বৈশাখীর এই মন্তব্যেই স্পষ্ট যে, দিলীপের সঙ্গে তাঁর কথা কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে। 'দিলীপদার নেতৃত্বে কাজ করব', এই মন্তব্য এর আগে কখনও শোনা যায়নি বৈশাখীর মুখে। বিজেপি সূত্রের খবর, রবিবার রাতের এই একটা ফোনালাপ অনেক বরফ গলিয়ে দিয়েছে। কথা এতটাই উষ্ণ আবহে হয়েছে যে দিলীপকে বৈশাখী মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। দিলীপও নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং শোভনের গোলপার্কের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারতে যাবেন বলে বৈশাখীকে জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement