দল ছোট ক্ষতি নেই, খাঁটি হোক।
দলের প্রবল দুর্দিনেও এটাই সিপিএমের বার্তা। এই লক্ষ্যে কাজ করতে গিয়ে যদি দলের বহর কমে, তাতেও পিছু ফিরতে নারাজ নেতৃত্ব। আসন্ন সম্মেলন-পর্বের আগে এটাই এখন আলিমুদ্দিনের কড়া বার্তা।
সম্মেলনের আগে এ বার দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকেও রাজ্য থেকে জেলা স্তরের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশে সিলমোহর পড়েছে। দলে প্রশ্ন উঠলেও রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ ও রাজ্য কমিটির সাংসদ মইনুল হাসানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন বসানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করা হচ্ছে না। আবার প্রাথমিক অভিযোগ খারিজ করে দিলেও রাজ্য কমিটির প্রবীণ সদস্য সুনীল সরকারের আচার-ব্যবহার শোধরানোর জন্য সতর্ক-বার্তা জারি করা হয়েছে। টালিগঞ্জ এলাকায় এক সময়ের এক দাপুটে নেতাকে বেসরকারি একটি কলেজের পদ ছাড়ার জন্য ফরমান জারি হয়েছে। সাসপেন্ড ও বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আরও এক ঝাঁক জেলা স্তরের নেতার বিরুদ্ধে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “নির্বাচনে ফল কেমন হচ্ছে, তার সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার সম্পর্ক নেই। সম্মেলন থেকে যথাসম্ভব স্বচ্ছ কমিটি গড়তে বলা হচ্ছে। তার আগেও যেখানে যেখানে সম্ভব, অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তদন্ত কমিশনের সুুপারিশ কার্যকর করা ছাড়াও সম্মেলনের সময় দলের কোনও অভ্যন্তরীণ সমস্যা দেখা দিলে তা সামলানোর জন্য রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর চার সদস্য মদন ঘোষ, মৃদুল দে, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য ও রবীন দেবকে নিয়ে কমিটি গড়ে দিয়েছে আলিমুদ্দিন।
রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে বিমান বসু এ বারের রাজ্য কমিটিতে যে রিপোর্ট পেশ করেছেন, সেখানেই বলা হয়েছে দু’টি কমিশনের কথা। প্রথমত, প্রাক্তন সাংসদ মইনুলের বিরুদ্ধে পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত যে অভিযোগ উঠেছিল, তা-ই নিয়ে তাঁর বক্তব্য রাজ্য সম্পাদক শুনেছেন। তার পরেও কমিশন করার সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে। দ্বিতীয়ত, হুগলির বর্ষীয়ান নেতা সুনীলবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোনও ভিত্তি পায়নি কমিশন। কিন্তু তার পরেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘কোনও কোনও কমরেড তাঁর আচার-আচরণ ও ব্যবহার আমলাতান্ত্রিক বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর এমন ব্যবহার পরিবর্তন করা উচিত। কমিশন তাঁকে এ ব্যাপারে সতর্ক করার সুপারিশ করছে’।
টালিগঞ্জের নেতা গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়কে অবিলম্বে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পরিচালন কর্মকর্তার পদ ছাড়তে বলা হয়েছে। তাঁর ক্ষেত্রেও তদন্ত কমিটি খোঁজ নিয়ে জেনেছে, দলের সম্মতি ছাড়াই তিনি ওই পদে গিয়েছিলেন। নির্বাচনে দলের কাজ না করার জন্য গার্ডেনরিচের চার সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর্থিক অনিয়মের জন্য এক জনকে ৬ মাস সাসপেন্ড করার সুপারিশ করেছে কলকাতা জেলা কমিটি। ‘শক্রপক্ষে যোগ’ দেওয়ায় কলকাতা জেলার পার্টি কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত এক নেতাকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। দলের নাম ব্যবহার করে ঋণ নিয়ে শোধ না করার দায়ে মুর্শিদাবাদের এক নেতাকে জোনাল সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। এই সব সিদ্ধান্তই অনুমোদন করেছে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী।
রাজ্য কমিটিতে এ বার ঠিক হয়েছে, রাজ্য সম্মেলন হবে ৮ থেকে ১২ মার্চ। সম্মেলন শুরু হবে ৮ মার্চ ব্রিগেড সমাবেশ দিয়ে। কাজের উপযুক্ত এবং স্বচ্ছ ও তরুণ মুখকেই সর্বস্তরে নয়া কমিটিতে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং পূর্ব মেদিনীপুরে বিশেষ পরিস্থিতির কারণে বেশ কিছু কমিটি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্ধমান ও বাঁকুড়াতেও কিছু লোকাল ও জোনাল কমিটি পুনর্গঠন হবে। আবার মালদহে দলের মধ্যবর্তী স্তরে দুর্বলতার কারণে জোনাল কমিটিই তুলে দেওয়া হবে। সমস্যা থাকলে অন্য জেলা নেতৃত্বও রাজ্য কমিটিকে জানিয়ে এমন অবলুপ্তির সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।